দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে এই মারণ ভাইরাস। প্রতিদিন ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন নজির গড়েছে ভারত। একদিকে যেমন দেশে দিনে নতুন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে, তেমনি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়েছে দেড় হাজার। কোভিড রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সরা। দু’ডোজ প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও দিল্লি-সহ বহু শহরের ডাক্তার-নার্সরা নিজেরাই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। অথচ এরই মধ্যে ‘কোভিড-যোদ্ধা’ ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার জীবনবিমার প্রকল্প বন্ধ করে দিল মোদী সরকার। এক সময় যে করোনা-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদী।
প্রসঙ্গত, গত বছর লকডাউন ঘোষণার পরেই মোদী সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করেছিল, কোভিডের মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকা ডাক্তার-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নিকাশি কর্মী, আশা কর্মীদের বিমার আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোভিডের মোকাবিলা করতে গিয়ে এই সমস্ত কর্মীদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবার ৫০ লক্ষ টাকা পাবেন। গত বছরের ২৬ মার্চ কোভিড ও লকডাউনের মোকাবিলায় ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’ ঘোষণার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন, সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা নিজেদের কতখানি ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন, তা সরকার ভোলেনি। সেই কারণেই এই বিমা প্রকল্প। অনেকের মতে, সেই সময়ে মোদী সরকারের ধারণা ছিল, তিন মাসেই কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে ফেলা যাবে। তাই প্রাথমিক ভাবে ২০২০ সালের ৩০ মার্চ থেকে তিন মাসের জন্য এই বিমার সুবিধা চালু হয়। কিন্তু পরে তার মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ করা হয়।
সরকারি সূত্রের খবর, ওই দিনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমা প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না। ২৪ মার্চের আগে কারও মৃত্যু হলে, তাঁর পরিবার বিমার টাকা পাবেন। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত নথি জমা করা যাবে। কেন বিমার মেয়াদ আর বাড়ানো হচ্ছে না, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য ওই চিঠিতে নেই। তবে সরকারের দাবি, এই বিমা থাকার ফলে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা মানসিক ভাবে কোভিড রোগীর চিকিৎসার সময়ে মানসিক জোর পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও যে ডাক্তার-নার্সরা এখন কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে বাকিদের উপর প্রবল কাজের চাপ পড়ছে। যদিও বিমার টাকা মিলছে না বলে আগেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ তুলেছিল। এবার সরকারি ভাবে তা বন্ধ হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, খরচ কমাতেই কি এ বার স্বাস্থ্যকর্মীদের বিমার প্রকল্পও বন্ধ করে দেওয়া হল?