দেশে আছড়ে পড়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। আর তার জেরে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙছে এই মারণ ভাইরাস। প্রতিদিন ঝড়ের গতিতে বাড়ছে দেশের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় নতুন নজির গড়েছে ভারত। শনিবার একদিনে দেশে করোনার কবলে পড়লেন প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষ! শুধু তাই নয়। গত তিনদিন ধরেই লাগাতার দৈনিক সংক্রমণ দু’লক্ষেরও অধিক। যেখানে ঘাটতি রয়েছে ভ্যাকসিনের। আকাল লেগেছে অক্সিজেনের। আবার হাসপাতালেও অভাব শয্যার। সব মিলিয়ে দেশের করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদী সরকার দিশাহারা। কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব সংক্রমণ? কোন পন্থায় রোখা যাবে মৃত্যু? নেই কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। হাতে কেবল ভ্যাকসিন। তা-ও উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে রাজ্যে রাজ্যে নষ্ট হচ্ছে ডোজ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ভ্যাকসিনের অভাব নিয়ে সরব হওয়ায় কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের শাসনে চলা রাজ্যগুলির সমালোচনা করেছিলেন। অথচ বাস্তবে বিজেপি শাসিত অধিকাংশ রাজ্যেই ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে সবেচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য মোতাবেক, এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে যত লোককে টিকা দেওয়া হয়েছে, গড়ে তার ৪ শতাংশ ডোজ নষ্ট হয়েছে। আর্থিক মূল্যে যা ৮৪ কোটি টাকা। ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে তামিলনাড়ু। এখানে ১১.০৩ শতাংশ ডোজ নষ্ট হয়েছে। এরপরেই বিজেপি শাসিত হরিয়ানা। নষ্ট হয়েছে ১০.৫ শতাংশ ভ্যাকসিনের ডোজ। মোদীর ‘ডবল ইঞ্জিনে’র শাসনে চলা আসাম, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড তো বটেই, খোদ গুজরাতেও রোজ নষ্ট হচ্ছে ভ্যাকসিন।
এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়া রুখতে রাজ্যগুলিকে উপযুক্ত পরিকল্পনার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। একইসঙ্গে ঘাটতি মেটাতে সম্পূর্ণ দেশীয় ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাকসিনে’র উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তুতকারক সংস্থা হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক লিমিটেডকে মোদী সরকার ৬৫ কোটি টাকা অনুদান দেবে বলে শুক্রবারই ঠিক হয়েছে। এই টাকায় ভারত বায়োটেক তার বেঙ্গালুরুর কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের উৎপাদন বাড়াবে। সরকারে আর্থিক সহায়তায় সেপ্টেম্বরে প্রতি মাসে গড়ে ১০ কোটি কোভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি করা হবে বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। অন্যদিকে, রেমডেসিভিরের উৎপাদন বাড়ানো এবং ব্যবহারে কড়াকড়ি করছে কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, রেমডেসিভিরেই করোনা সারে, এমন প্রমাণ মেলেনি বলেই জানিয়ে দিয়েছেন গবেষকরা। এটি মূলত পরীক্ষামূলকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন করোনা সংক্রান্ত কেন্দ্রের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ বিনোদকুমার পল। তবুও করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে উদ্ভূত ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রেমডিসিভিরের ওপরই জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন এদিন বলেছেন, মাঝে আমরা এই অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ তৈরি কমিয়ে দিয়েছিলাম। করোনার নির্দিষ্ট কোনও দাওয়াই নেই। তবুও রেমডেসিভিরেই আবার ভরসা রাখা হচ্ছে। তাই একদিকে এর উৎপাদন বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে কালোবাজারি আটকাতে রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।