রাজ্যজুড়ে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ এই আবহে আজ নির্বাচন কমিশন সর্বদল বৈঠক ডেকেছে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, শেষ তিন দফার ভোট একদিনে করা হোক। এরই মধ্যে প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নদীয়া জেলার নবদ্বীপ এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়া, জগদ্দল এবং নোয়াপাড়ায় জনসভা সারলেন মমতা।
জগদ্দলে বিজেপিকে একহাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “লোকসভার পর আমি নিজে এসে এখানে গন্ডগোল মিটিয়েছি। নাহলে মিটত না। বিজেপিরা সেই গন্ডগোল লাগিয়েছিল ভাটপাড়ায়। যে অত্যাচার, সন্ত্রাস করেছিল তা যেন আবার ফিরে না আসে। আপনারা কি চান বিজেপি আবার জিতে সন্ত্রাস করুক? বাংলার একটা সংস্কৃতি সম্মান আছে। তৃণমূলকে ভোট দিলে তৃণমূল কাজ করবে। আমরা যেমন শুভ নববর্ষ পালন করি তামন হিন্দি দিবসও পালন করি। আমরা যেমন দুর্গা পুজো করি, ছট পুজোও করি। দুদিন ছুটিও দিই। সবাই যেন মাতৃ ভাষায় পড়তে প্যাঁরে তার ব্যবস্থা করেছি। আমরা জুটের ট্রেনিং দিচ্ছি। পানীয় জলের কাজ হচ্ছে এখানে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্যে ৪২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট করা হয়েছে, বাড়িঘর করে দেওয়া হয়েছে। পানীয় জলের প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।”
পাশাপাশি মমতার বক্তব্য, “আমাদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প আছে। আমরাই ৫৫ টাকা করে দিই। ৬০ বছরে আপনারা আড়াই লক্ষ টাকা করে পাবেন। আমরা কাজ করে ভোট চাইছি। ৭ টা জুট মিল বন্ধ হয়ে গেছে আমরা দেড় হাজার টাকা করে দিই। ডানলপ বন্ধ হওয়ার পর প্রত্যেক শ্রমিককে ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছি। বিজেপি মিথ্যে কথা বলে। এখানে নাকি দুর্গা পুজো, কালী পুজো, লক্ষ্মী পুজো হয় না। এই মিথ্যে বলার জন্যে ওরা কি ক্ষমা চাইবে?” গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মোদী সরকারকে প্রবল কঠাক্ষ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। “গ্যাসের দাম ১০০০ টাকা। এরপর ১০ হাজার টাকা হবে। এদিকে ক্যাশ দিচ্ছে। বলুন ক্যাশ চাই না গ্যাস চাই। প্রধানমন্ত্রী শুধু মিথ্যে কথা বলে। গুজরাটে এক বাঙালিকে চিকিৎসা না করে মেরে ফেলেছে। আমরা বাঙালি অবাঙালি করি না। এসব বাংলায় হয় না। গুজরাটে হয়।” বলেন মমতা।
করোনা টিকাকরণ প্রসঙ্গেও মোদীকে বিঁধে মমতা বলেন, “আমি বিনা পয়সায় দেওয়ার জন্যে ভ্যাক্সিন কিনতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম। জবাব আসেনি। বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে আসছে। কারও কোভিড টেস্ট করাচ্ছে না। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। আমাদের কাছে যতটুকু আছে আমরা বিনা পয়সায় দেব। আমরা টাকা নিয়ে তৈরি আছি ইঞ্জেকশন দিচ্ছে না। ভোটের প্রচার করতে রোজ আসছেন। কোভিডের সময় আসতে পারেনি।” এরপর যোগ করেন, “যেখানে দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে। সেখানে আমরা বাংলায় দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি। এটা আমাদের গর্ব। আমরা পুরোহিত ভাতা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী সব দিই। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের আমরা ৫ লক্ষ টাকার চিকিৎসা বিনা পয়সায় দিই। কোন রাজ্য দেয়? পানীয় জল বিনা পয়সায়, খাদ্য বিনা পয়সায়, ৭৫ ইউনিট অবধি বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ।”
জনগণের উদ্দেশে মমতার প্রতিশ্রুতি, “এবার সরকার জিতলে আমরা দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছে দিয়ে আসব। আমি একা জিতলে হবে না। আমাদের সব প্রার্থীদের জেতাতে হবে। মা বোনেদের হাতে আমি মাসে মাসে ৫০০- ১০০০ টাকা করে দেব। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্যে ১০ লক্ষ টাকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড করে দেব। আমরা গ্যারেন্টর হয়ে কম সুদে ঋণ দেব। ছেলেমেয়েরা বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করবে। আপনাদের কোথাও যেতে হবে না। বিদেশে পড়াশোনা করে বাংলার ছেলেমেয়েরা বিশ্বজয় করে বাংলায় ফিরে আসবে। দশ লক্ষ স্বনির্ভর গ্রুপ তৈরি করব। ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেব। মা ক্যান্টিনে ৫ টাকায় ভাত, ডাল, ডিমে ঝোল দিচ্ছি। এবারের নির্বাচন বাংলার সম্মান বাঁচানোর নির্বাচন। বাংলাকে গুজরাট হতে দেব না। বাংলাকে বাংলায় থাকতে হবে না। বাংলায় বাঙালি, অবাঙালি কেউ কাউকে বিরক্ত করে না। আমরা ভাগাভাগি, আতঙ্ক, যুদ্ধ, দাঙ্গা চাই না। একই পাড়ায় থাকব, একই কলের জল খাব, উৎসব করব ভাগাভাগি করে থাকে যায়? সবাই নিজের নিজের ধর্ম পালন করব। ধর্ম যার যার, আপনার। উৎসব সবার।”