সোমবারই নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবতীয় নির্বাচনী প্রচার এর উপরে ২৪ ঘন্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট পরেই প্রচারে নেমে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, তারপর বিধাননগরে জনসভা সারলেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ সকালে মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসেছিলেন তিনি।
বিধাননগরের জনসভা থেকে গেরুয়াশিবিরকে প্রবল কটাক্ষ করেন মমতা। “বিজেপি জানে হেরে যাবে। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আটকাতে সমস্ত এজেন্সিকে রাস্তায় নামিয়েছে। আমার আজ সব মিটিং নষ্ট হয়েছে। আগামীকাল আমি শীতলকুচি যাব। যে পাঁচ জন মারা গেছে তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে। একদিকে আমি লড়াই করছি। আর একটা গুন্ডাবাজ পার্টি, মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছে। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। সবাইকে বলব ভোট ভাগ করবেন না। আমরাই আপনাকে সাহায্য করি। সল্টলেকে অনেক নন বেঙ্গলি থাকে। যদি দাঙ্গা না চান তৃণমূলকে ভোট দিন।” জানান তৃণমূল সুপ্রিমো।
পাশাপাশি বলেন, “অর্জুন সিংহকে কে দেখেছেন বোম মেরেছে, বাড়ি বাড়ি থেকে মহিলাদের টেনে বার করেছে। একটা পরিবারে ভালো খারাপ মিলিয়ে থাকে। আমরা খারাপ করলে তাদের ট্যাকেল করি। বিজেপিরা গুলি করে দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গুলি চালানো, দাঙ্গা করা কোন রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। মুখের ভাষা রাজনীতিবিদদের পরিচয়। একজন বলছে বুকের ওপর গুলি করে দাও। চার জনকে কেন আটজনকে মার। এদের ব্যান না করে আমাকে করছে। এক জায়গায় এক এক কথা বলছে। দার্জিলিং-এ গিয়ে বলছে আমরা এনআরসি চাই না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চায়। মতুয়াদের ওখানে গিয়ে বলছে মমতা তপশিলিদের পছন্দ করে না। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যেবাদী। ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে হেলিকপ্টারে চাপে। তা দিয়ে ৫ হাজার মেয়ের বিয়ে হয়ে যেত।”
গ্যাসের দাম ও এনআরসি প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “গ্যাসের দাম ৯০০ টাকা। ক্যাশ চাই না গ্যাস চাই? বাংলাকে দখল করতে দেব না। আমাকে চমকালে আমি ধমকাই, গর্জালে আমি বর্ষাই। ভাবতে লজ্জা লাগে মোদীর মতো দাঙ্গাবাজ আজ বাংলাকে গাইড করছে। গুজরাটে দাঙ্গা করেছে। এই মোদী আর অমিত শাহ। আসামে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে ডিটেনশান ক্যাম্পে পাঠিয়েছে। ভোট মিটতেই আবার শুরু করেছে। আমি বাংলায় এনপিআর করতে দিই নি। একটা লোকেরও নাগরিকত্ব যাবে না। জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া। আমি জাতপাত করি না। জেনে রাখুন কেউ উচ্ছেদ হবে না। একটা উদবাস্তু কলোনির বাসিন্দার যা ভোটের দাম বাকিদেরও তাই।”
শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “ভোট গণতন্ত্রের উৎসব। সেখানে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে।” এরপর যোগ করেন, “ভরি ভরি সোনা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখন পার্টিই সোনা। সেখানে সব খরচ হচ্ছে। কাল বাগুইহাটিতে আগুন লেগেছিল। সুজিতকে ফোন করলাম। সঙ্গে সঙ্গে ও পৌঁছে গেল। তাপস চ্যাটার্জী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারে। এমন লোককেই চাই। অদিতি মিষ্টি মেয়ে। এদের ভোট দেবেন। গদ্দারদের ভোট দেবেন না।” করোন টিকার যোগান নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন তিনি। “তিনমাস আগে মোদীকে চিঠি লিখেছিলাম, সবাইকে বিনে পয়সায় ভ্যাক্সিন দেব, পৌঁছে দিন। কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া নেওয়া যায় না। দিল না। তখন দিতে পারলে এত ছড়াত না। এর জন্যে দায়ী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটে এক পার্টিকর্মী ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। কী বোঝে সে ইঞ্জেকশনের? আমাদের এসব হয় না। আমরা টাকা নিয়ে বসে আছি। কিছু কিছু জায়গায় কাল থেকে দেব ভ্যাক্সিন বিনে পয়সায়।” জানান মমতা। এও বলেন, “কোভিডের সময় নরেন্দ্র মোদী এসেছিল? আমি এলাকায় এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছি। বিনে পয়সায় চিকিৎসা দিয়েছি। ৬৪ টা নার্সিং হোমের ভাড়া দিয়েছি।”
জনগণের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, ঐক্যশ্রী, রূপশ্রী করেছি বলেছি বলে বলছি ভোট দিন । একটা বাচ্চা জন্মালে গাছ দিই। তার ১৮ বছর হলে ৫ লাখ টাকা দাম হয়। ১২ ক্লাসের পড়ুয়াদের ট্যাবের ১০ হাজার টাকা দিচ্ছি। বিনে পয়সায় আমরাই একমাত্র বিনে পয়সায় রেশন দিই। স্বাস্থ্য সাথী দিচ্ছি। আমরা জিতলে দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌছে দেব। আমি মা বোনেদের হাতে ৫০০- ১০০০ টাকা তুলে দেব। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ১০ লক্ষ টাকা কম সুদের ঋণ দেব।” এছাড়াও সভায় উপস্থিত মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মমতার বার্তা, “আমার এক পা আর আমার মা বোনেদের পা দিয়ে আমি চলছি। মা বোনেরা আমায় শক্তি জুগিয়েছেন। ভাইয়েরা সাহস দিচ্ছে। বলছে এক পায়ে খেলা হবে। এটাই আমাকে সাহস যোগাচ্ছে।”