প্রতি বছর এক-একটা আইপিএল আসে আর কিছু নামগুলো তারার মতো জ্বলজ্বল করতে থাকে ক্রিকেট আকাশে। সারা বছর এদের নাম শোনা যায় না। ভারতীয় দলের আশেপাশেও চোখে পড়ে না। কিন্তু আইপিএল মানেই যে তা-ই। অনামী, অবহেলিত রত্নদের তুলে আনার আশ্চর্য প্রদীপ! গত রবিবার যেমন ছিল কেকেআরের দুই তরুণ তুর্কি রাহুল ত্রিপাঠী আর নীতীশ রানার রাত। নীতীশ কোভিড সংক্রমণকে হার মানিয়ে মাঠে ফেরা এক পরাক্রমশালী যোদ্ধা। যাঁর আদর্শ দুই প্রাক্তন বাঁ হাতি- সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং গৌতম গম্ভীর। গত ম্যাচে তাঁর ৫৬ বলে ৮০ রান এই প্রবল আতঙ্কের সময়েও সাহস জুগিয়ে যাবে। আর অপরজন রাহুল ত্রিপাঠী- আমিরশাহিতে গত বার যাঁর দাপট দেখে গ্যালারি থেকে শাহরুখ খান সেই বিখ্যাত সংলাপ আউড়েছিলেন, ‘‘রাহুল, নাম তো শুনাহি হোগা!’’
নাইটদের যদিও উদ্বোধনী ম্যাচ জয়ের পরেও আগামীর কাঁটায় ঘেরা রাস্তার কথা ভাবতে হচ্ছে। আজ, দ্বিতীয় ম্যাচেই যে তারা মুখোমুখি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের! নিজের শহরের দলের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ সব সময় শাহরুখ খানের কাছে সম্মানের ম্যাচ। আর তাতেই কি না মাত্র ৬৭ রানে অলআউট-সহ নানা লজ্জা সব সময় অপেক্ষা করে থেকেছে বলিউড বাদশার জন্য। আতঙ্কের সব তথ্য ভেসে ওঠে এই ম্যাচটা এলেই। মোট ২৭ বারের সাক্ষাতে নাইটরা হেরেছে ২১ বার। শেষ ১০ সাক্ষাতে হার ৯টিতে।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যে এক নয়, তা বুঝতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ডেভিড ওয়ার্নারদের কোনও যশপ্রীত বুমরা, ট্রেন্ট বোল্ট ছিল না। যাঁরা নিয়মিত ভাবে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটারের উপর ঝোড়ো গতি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে। এর সঙ্গে বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধে মুম্বইয়ের হয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন পেস-প্রতিভা দীর্ঘকায়, বাঁ হাতি মার্কো জ্যানসেনের। তিন বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কোহালি যখন জোহানেসবার্গ টেস্ট খেলতে নামছেন, নেট-বোলার ছিলেন জ্যানসেন। কয়েক বার ভারত অধিনায়ককে পরাস্ত করে তাঁর প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন।
যার ফলে কোনও সন্দেহ নেই, নাইট ব্যাটসম্যানদের অনেক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলবে মুম্বই এক্সপ্রেস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা না থাকা নীতীশ-রাহুলদের পরীক্ষায় ফেলার সেরা হাতিয়ার শরীর তাক করা বোলিং। রাসেল থেকে ইয়ন মর্গ্যান- প্রত্যেকের দুর্বলতা রয়েছে শর্ট পিচ্ড বোলিংয়ে। সেক্ষেত্রে শুভমন গিলের ভূমিকা এই কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, যে-হেতু গত কয়েক মাস ভারতীয় দলের ওপেনার হিসেবে এই উচ্চ গতিসম্পন্ন, বাউন্স ভরা আন্তর্জাতিক মানের বোলিংয়ের গ্রহে তিনি ঘোরাফেরা করেছেন। গিলের টেকনিকের পরীক্ষা নেবে বুমরা-বোল্ট জুটি।
সবমিলিয়ে ম্যাচটা আরও আকর্ষণীয় মোড়ক পাচ্ছে দু’দলের তরুণ প্রজন্মের জন্য। নাইটদের ব্যাটিংয়ে নীতীশ-রাহুলের সঙ্গে বোলিংয়ে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, বরুণ চক্রবর্তী আছেন। মুম্বইয়ের তেমনই রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব, ঈশান কিশান, ক্রুণাল পাণ্ড্যরা। সদ্য ভারতীয় দলের জার্সিতে যাঁরা স্বপ্নের অভিষেক ঘটিয়ে টগবগ করছেন। আর একরাশ আতঙ্কের ইতিহাসের মধ্যেও নাইটদের স্বস্তি দেবে ইয়ন মর্গ্যানের নেতৃত্ব। ইংল্যান্ডের দায়িত্ব নিয়ে অতি আগ্রাসী ব্যাটিং-নীতি এনে যিনি বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিলেন বাইশ গজে। আর এবার সেই একইরকম বিপ্লব কেকেআরের জার্সিতেও ঘটাতে মরিয়া দলের ক্যাপ্টেন মর্গ্যান।