নন্দীগ্রামে আক্রান্ত হওয়ার পরেও দমে যাননি তিনি। হুইল চেয়ারে চেপেই ভোট প্রচারে রাজ্যের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আক্রমণ শানাচ্ছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। এদিন রানাঘাটের সভাতেও তার অন্যথা হল না। সোমবার শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে তীব্র আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘রাজনীতি মানে করে খাওয়া নয়। রাজনীতি মানে গুলি চালানো যায় না।’
এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘বিজেপি-র পরিকল্পনা ছিল আমাকে আঘাত করে ঘরে বসিয়ে রাখা, যাতে আমি বাইরে বেরোতে না পারি।’ তবে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘অসুস্থ শরীরে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আপনারা কি চান বাংলা বহিরাগত গুন্ডাদের হাতে চলে যাক? বাংলাকে বাঁচাতে হবে।’ তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘মা-বোনেরা বলুন গুলি চালানোর জন্য ভোট দেবেন নাকি গুলি চালানোর জন্য ভোট দেবেন।’
শীতলকুচির ঘটনা প্রসঙ্গে এদিন মমতা বলেন, ‘কোচবিহারের শীতলকুচিতে যে ভাবে ভোটের লাইনে যে ভাবে গুলি চালিয়েছে। বিজেপিকে কেউ ক্ষমা করবেন না। ওরা হিন্দু-মুসলিম করে। মানুষ মারা গেলে হিন্দু-মুসলিম হয়? মানুষের রক্তে হিন্দু-মুসলমান হয়? প্রথমে নিজেদের একটা লোককে খুন করেছে। এরা পারে না এমন কাজ নেই। ওদের একজন মহিলা সাংসদ নিজের গাড়ি নিজে ভাঙছিলেন। এরা নিজের লোককে নিজে মেরে দিতে পারে। তার পর হিন্দু-মুসলিম করবে।’
বিজেপিকে নিশানায় নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এরা নাকি রাজনীতি করবে রাজনীতি করতে গেলে কথাবর্তা শেখা দরকার। বুঝে কথা বলা দরকার। রাজনীতি মানে করে খাওয়া নয়। বিজেপি মনে করছে রাজনীতি মানে গুলি করার অধিকার দেওয়া, এটা রাজনীতি নয়। চারটি লোককে ভোটের লাইনে গুলি করে মেনে নিল। তার পরেও বলছে ৮ জনকে গুলি করা উচিত ছিল। সবাইকে বুকে গুলি করে দাও। এরা অদ্ভূত। একটা রাজনৈতিক দল বুক দেখে গুলি চালিয়ে দিতে বলছে। এদের নিষিদ্ধ করা উচিত।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘কী দেখে ভোট দেবেন এদের। গ্যাসের দাম কত? আমি বিনা পয়সায় চাল দেব আর আপনারা ১০০০ টাকার গ্যাস কিনে সেই চাল ফোটাবেন? ২০০-৫০০ দিতে এলে বলবেন, চাই না। ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবে বলেছিল, আগে সেই টাকা চাইবেন।’ তিনি আসামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আসামে এনআরসি নিয়ে কী করেছে মনে আছে তো? ১৪ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। পুলিশ নামিয়েছে ভোট করিয়েছে। অসমে বাঙালিদের উপর অত্যাচার আর বাংলায় এসে ভোট চাই? লজ্জা করে না!’
মমতার হুঙ্কার, ‘আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করি। বুকের পাটা আছে আমার। বিজেপি-র ধমকানি-চমকানিতে ভয় পাই না।’ এদিন তাঁর প্রতিশ্রুতি, ‘আমাদের দেওয়া স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন, সে এমন হোক বা ভোলোর।’ তিনি জানান, ‘বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেব। নদীয়ায় অনেক কর্মসংস্থান হবে। নবদ্বীপে চৈতন্য ধামের জন্য ৭০০ একর জমি দিয়েছি। হেলিপ্যাড হবে, দোকান হবে, কর্মসংস্থান হবে। পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য ১০ টাকা করে ক্রেডিট কার্ড দেবে আমাদের সরকার।’