২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সভা-মিছিলগুলিতে দেখা গিয়েছিল জনতার ঢল। যার ফলে রাজ্যে ১৮টি আসনে জয়ী হয় তারা। কিন্তু সেই ছবিটা আর দেখা যাচ্ছে না এখন। বরং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এই ভরা ভোটের ভাজারে ক্রমশই ফিকে হচ্ছে গেরুয়া ক্রেজ। আমজনতার সমর্থন হারাচ্ছে বিজেপি। সুপার ফ্লপ হচ্ছে একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতার সভা৷ এবার ফের দেখা গেল সেই একই ছবি। আয়োজনে কোনও খামতি ছিল না। ডিজের সঙ্গে ছিল মহিলাদের নৃত্য। মঞ্চ বেঁধে রীতিমতো ‘জলসা’র আসর। তার পরও উত্তর-দক্ষিণের মন জয় করতে পারলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কোথাও কোথাও তাঁর সভা কিংবা রোড শো-য়ে ভিড় হয়নি। আবার কোথাও তাঁর কথা শুনে সাধারণ মানুষের টিপ্পনি—‘সব ভাঁওতাবাজি। একটাও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে না ওঁরা।’ কেউ কেউ আবার সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘বাংলায় ক্ষমতায় এলে বিজেপির প্রথম কাজ হবে এনআরসি চালু করা। আর তাকে ঘিরেই বাড়বে অশান্তি, হিংসা।’
শুক্রবার ভোট প্রচারের একাধিক কর্মসূচী নিয়ে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ চষে বেড়ান শাহ। কোচবিহারের শীতলকুচি ও আলিপুরদুয়ারের কালিচিনিতে দু’টি জনসভা করেন। গত ১৫ দিন ধরে কোচবিহার জেলাজুড়ে মাইকিং করেছিল বিজেপি। তাতেও কোনও লাভ হয়নি। শীতলকুচির সভা কার্যত ফ্লপ। মেরেকেটে ১২ হাজার লোক হয়। ভিড় কম হওয়ায় যদিও জেলা বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন সাফাই দিচ্ছেন, ‘রোদের জন্য মাঠে ভিড় কম ছিল।’ তাই মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ভাষণ শেষ করেই কালচিনির সভায় চলে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে দু’টি জনসভাতেই প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেন তিনি। রাজবংশী সমাজের মন পেতে পঞ্চানন বর্মার জন্মভিটায় মূর্তি বসানো, উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা, উন্নয়নে বছরে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ, কোচবিহার রাসমেলা ময়দানকে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকাঠামো গড়ে তোলার আশ্বাস দেন শাহ। যা শুনেই উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে গুঞ্জন ওঠে, লোকসভা ভোটে বিজেপি বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার কোনওটাই পূরণ করতে পারেনি। পরিবর্তে রান্নার গ্যাস, পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়ছে। ব্যাঙ্কে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার ৪৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে।
আবার দক্ষিণবঙ্গে মূলত দু’টি রোড শো করেন শাহ। একটি বারুইপুরে। অন্যটি আরামবাগে। দু’টি কর্মসূচীতেই বিনোদনের ঢালাও ব্যবস্থা রেখেছিল বিজেপি। কিন্তু বারুইপুরে তেমন কোনও সাড়া মেলেনি। ফলত, রবীন্দ্র ভবন মাঠ থেকে রেল গেট পেট্রল পাম্প পর্যন্ত প্রায় এক কিমি পথ রোর্ডী শো করার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। কিন্তু মাত্র ৫০০ মিটার গিয়ে আচমকা নিজের গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি। হতাশ হন কর্মীরা। এদিন আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত রোড শো করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন আরামবাগ চার বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। দুপুর ২টো থেকেই কর্মী-সমর্থকরা বাসস্ট্যান্ড মোড়ে অপেক্ষা করেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ পরেও শাহ না আসায় অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টের পর হেলিকপ্টারে পৌঁছন তিনি। শাহর ভাষণ শুনে আরামবাগের বাসিন্দারা বলছেন, অমিত শাহর বক্তব্যেই পরিষ্কার বাংলায় এনআরসি আনতে চলেছে বিজেপি। ধর্ম নিয়ে বাংলা ভাগাভাগি করার রাজনীতি করতে চাইছে।