ভোটের দুয়ারে এসেও কাটছে না সমস্যা। প্রার্থী বদলের পরও বিজেপি কর্মীদের একাংশের মধ্যে বেড়েছে ক্ষোভ। ব্যতিক্রম নয় গলসিও। আদি বিজেপি নেতারা সেখানে সরাসরি বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে গোঁজ হিসেবে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তপন বাগদি নামে আর এক আদি বিজেপি নেতা মনোনয়ন জমা দেবেন বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমান জেলা সদরের ন’টি আসনে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর অধিকাংশ কেন্দ্রেই গোঁজ প্রার্থীদের মনোনয়ন জমার তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে গলসিতে প্রথমে পুরোনো বিজেপি নেতা তপন বাগদি প্রার্থী হওয়াতে দলের আদি গোষ্ঠী খুশিই হয়েছিল। কিন্তু পরে আচমকা তাঁকে সরিয়ে বিকাশ বিশ্বাসকে প্রার্থী করায় আদিরা ক্ষেপে গিয়ে এবার গোঁজ হিসেবে নির্দল প্রার্থীকে লড়াইয়ে নামাচ্ছেন। আর এতেই চিন্তা বেড়েছে গেরুয়াশিবিরে। কারণ, গলসিতে ধারে-ভারে অনেক এগিয়েছিল বিজেপি। শেষ মুহূর্তে প্রার্থী বদল করায় কর্মী-সমর্থকদের মনোবলে ধাক্কা লেগেছে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। পাশাপশি, তপন বাগদি দীর্ঘদিন বিজেপি করে আজ চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছেন। তাঁর অনুগামীরাও নতুন প্রার্থীর হয়ে ভোটের ময়দানে আদৌ নামবেন কিনা তা নিয়েও তৈরি হয়েছে যথেষ্ট সংশয়। বুধবার তপনবাবু বলেন, “আমি চূড়ান্ত শোকাহত। দল আমার সঙ্গে এটা ঠিক করল না। আমি এই ঘটনার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আপাতত বাড়িতে থাকব বলেই ঠিক করেছি। কারওর সঙ্গে দেখা করছি না, ফোনেও কথা বলছি না।”
এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই গলসিতে বৈঠক করে গোঁজ হিসেবে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছেন বিজেপির আদি নেতারা। আজ, বৃহস্পতিবার তপন বাগদি নির্দল প্রার্থী হিসেবে গলসি বিধানসভা কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ইতিমধ্যে তাঁর মনোনয়নপত্রের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলাশাসক দপ্তর থেকে তুলে এনেছেন বিজেপির আদি নেতারা। বর্ধমান দক্ষিণের নির্দল প্রার্থী তথা বিজেপির বহিষ্কৃত নেতা স্মৃতিকান্ত মণ্ডল বলেন, “আমরা প্রথমে গলসি কেন্দ্রে গোঁজ প্রার্থী দেব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তপন বাগদিকে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা ওখানে নির্দলে আদি বিজেপির একজনকে দাঁড় করাচ্ছি। ইতিমধ্যে বৈঠকে করেছি। কাগজ পত্রের কাজও এগিয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেবেন উনি। আমরা তপনবাবুর সঙ্গেও এবিষয়ে কথা বলেছি।”
উল্লেখ্য, পদ্ম শিবিরের পুরনো নেতা তপন বাগদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি থেকে প্রার্থী করে, পরে তাকে সরে দাঁড়াতে বলেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব ও সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া। তাঁকে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে মানছে না দল, সেটা জানার পরও সোমবার তিনি জেলাশাসকের দপ্তরে দলীয় প্রতীক ছাড়াই মনোনয়ন জমা দিতে যান। তাঁর কাগজপত্র যখন পরীক্ষা করা হচ্ছিল, তখনই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই কেন্দ্রে নতুন প্রার্থী হিসেবে বিকাশ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করে। শেষ মুহূর্তে গলসির বিজেপি প্রার্থী বদল করায় দলের ভিতর প্রবল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এখানে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই জোরকদমে প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন তপন বাগদি। কাজেই অসন্তুষ্ট হন তিনি। ভোটের মুখে এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে ফেলল বিজেপি নেতৃত্বকে।