এ অভিযোগ নতুন নয়। চলন্ত ট্রেনে নিম্নমানের খাবার ও পানীয় জল সরবরাহের জন্য বরাবরই অসন্তোষের মুখে পড়েছে রেল। কিন্তু তা হলেও অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি টার্মিনেট করার মতো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটেনি তারা। পরিবর্তে জরিমানা আদায় এবং সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের। বুধবার লোকসভায় লিখিতভাবে এই সংক্রান্ত তথ্য পেশ করেছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আর তাতেই স্পষ্ট হয়েছে চিত্র। গত ২০২০ সালের ১লা এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এদিন লোকসভায় উল্লিখিত তথ্য পেশ করেছে রেলমন্ত্রক। অর্থাৎ, নিম্নমানের খাবার এবং রেল নীর ছাড়া অন্য প্যাকেটবন্দি পানীয় জল সরবরাহ নিয়ে যতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে, তার প্রতিটিই হয় শ্রমিক স্পেশাল কিংবা বিশেষ যাত্রীবাহী ট্রেন সংক্রান্ত। কারণ কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় দেশ জোড়া লকডাউনের জন্য গত বছর মার্চ মাসের শেষ থেকেই সারা দেশে বন্ধ হয়ে রয়েছে নিয়মিত ট্রেন চলাচল।
বুধবার লোকসভায় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের লিখিতভাবে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১লা এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিম্নমানের খাবার এবং রেল নীরের পরিবর্তে অন্যান্য প্যাকেটবন্দি জল সরবরাহের অভিযোগ জমা পড়েছে মোট ২৭৮টি। এর মধ্যে চলন্ত ট্রেনে শুধু নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগই জমা পড়েছে ২৩৬টি। পানীয় জল সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে ৪২টি। লোকসভায় পেশ করা তথ্য অনুসারে এই সংক্রান্ত মোট ২৭৮টি অভিযোগের মধ্যে মাত্র একটি ক্ষেত্রে টার্মিনেশনের রাস্তায় হেঁটেছে রেলমন্ত্রক। অভিযুক্ত সংস্থাকে সতর্ক করা হয়েছে মোট ৮৩টি ক্ষেত্রে। আর জরিমানা আদায় করা হয়েছে এরকম মোট ৫৯টি কেসে। এর মধ্যে চলন্ত ট্রেনে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগে জরিমানা আদায় হয়েছে ৪২টি ক্ষেত্রে। পানীয় জল সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য জরিমানা আদায় হয়েছে ১৭টি কেসে।
উল্লেখ্য, লোকসভায় পেশ হওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে যে, উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে জমা পড়া অভিযোগের জেরে জরিমানা আদায় হয়েছে মোট ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র নিম্নমানের খাবার সরবরাহের জন্যই জরিমানা আদায় হয়েছে মোট ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৩০০ টাকা। লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, “চলন্ত ট্রেনে যাত্রীদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে না। বরং ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার পরামর্শ মেনেই রেল সবসময় চেষ্টা করে যাতে, যাত্রীদের কাছে স্বাস্থ্যকর ও উন্নত গুণমান সম্পন্ন খাবার সরবরাহ করা যায়। এই লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপও নিয়েছে রেল। যেমন কিচেনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে, খাবারের সবিস্তার তথ্য সম্বলিত কিউআর কোড দেওয়া হচ্ছে খাবারের প্যাকেটে, কাস্টমার স্যাটিসফেকশন সার্ভে করানো হচ্ছে। এমনকী করানো হচ্ছে থার্ড পার্টি অডিটও।” রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীদের কেটারিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য আইআরসিটিসিরপক্ষ থেকে বেশ কিছু বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থাকেও নিয়োগ করা হয়েছে।