রবিবারের জলপাইগুড়ি সাক্ষী থাকল এক জনদরদী দৃশ্যের। পূর্বনির্ধারিত প্রচার কর্মসূচী অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি সদরের প্রার্থী ডাঃ প্রদীপকুমার বর্মা এদিন ছিলেন জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারে। হঠাৎই পকেটের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। হ্যালো বলার পর দু-তিন সেকেন্ড চুপ। তারপরই বললেন, “এখনই আসছি।” সঙ্গে থাকা কর্মীরা তখন কিছুটা উদ্বিগ্ন। কয়েকজনের প্রশ্ন, কোনও সমস্যা? প্রার্থী তাঁদের আশ্বস্ত করলেন, “তেমন কিছু নয়। আধ ঘণ্টার জন্য আমাকে নার্সিংহোমে যেতে হবে।”
এরপরই স্টেশন বাজার থেকে টোটোয় উঠে সোজা বাবুপাড়ায় নিজের নার্সিংহোমে। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে অপারেশন থিয়েটার (ওটি)-এর সামনে। অন্তঃসত্ত্বা ঋতুপর্ণা সোমরায় নাগকে নিয়ে ততক্ষণে নার্সিংহোমের কর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। রোগীর পরিবারের সদস্যদের হাসিমুখে আশ্বস্ত করে প্রার্থী দলীয় ব্যাজ লাগানো শার্টটি ওটির দরজার ওপর ঝুলিয়ে রেখে অ্যাপ্রন পরে ভিতরে ঢুকে গেলেন। মিনিট ২০ পর ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানকে নিয়ে যখন বেরিয়ে এলেন, তখন তাঁর মুখে যুদ্ধজয়ে হাসি ঝলমল। মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে বলে সবাইকে জানিয়ে ঝটপট পোশাক বদলে ফের রাজনীতির ময়দানের উদ্দেশে দৌড়োলেন।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর থেকে তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে শহরের সংশ্লিষ্ট মহলে জোর চর্চা। চিকিৎসক প্রার্থী অবশ্য কিছুটা লজ্জিত। ডাঃ প্রদীপকুমার বর্মা বলছেন, রোগীদের আবদার চিকিৎসকদের কিছু ক্ষেত্রে রাখতেই হয়। এটাও তেমনই একটা ঘটনা মাত্র। তবে প্রচারের মাঝে এই ঘটনা যে নার্সিংহোম-পাগল তাঁকে আরও উৎসাহ জোগাবে তা প্রার্থী নিজেও মেনে নেন। সদ্য মা হওয়া ঋতুপর্ণার দিদি ঋতুঞ্জনা সরকার নাগ বলছেন, কোনও কোনও চিকিৎসকের ওপর রোগীদের আলাদা বিশ্বাস কাজ করে। বোনের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। প্রার্থী হওয়ার পর ডাক্তারবাবু নার্সিংহোম থেকে দুমাসের ছুটি নিলেও বোন অন্য কারও কাছে অপারেশন করাবে না বলে গোঁ ধরে। আজ উনি যা করলেন তাতে আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমের স্টাফ নার্স সঞ্চিতা সরকার বলেন, ডাক্তারবাবু যে এই রোগীর অপারেশন করবেন তা আগেই ঠিক ছিল। তবে বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সময়সূচি পরিবর্তন করে এদিনই অস্ত্রোপচার করতে হয়। কারও অবশ্য কোনও অসুবিধা হয়নি।
উল্লেখ্য, প্রদীপকুমার বর্মার মেয়ে পৌলোমীও চিকিৎসক। নিজের অধীনে থাকা রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্ব মেয়েকেই দিয়েছেন। প্রিয় স্যারকে রোজকার মতো না পেয়ে কর্মীদের কিছুটা মন খারাপ। সঞ্চিতা বলছেন, “স্যার আমাদের অভিভাবক। উনি নার্সিংহোমে না এলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। প্রতিটি মুহূর্তে স্যরের অভাব বোধ করি। স্যর ছুটিতে থাকলেও যে কোনও প্রয়োজনে আমরা ফোন করে ওঁর পরামর্শ চাই।”