রাজ্যজুড়ে প্রার্থী ঘিরে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের উত্তাপ তো চলছিলই। এবার দ্বিতীয় দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা হতেই সে আগুনে ঘি পড়ল। রায়গঞ্জে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। হেমতাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী ও ইটাহার কেন্দ্র নিয়ে আপত্তি তাঁদের। দাবি, এত দিন দলের অন্দরে থেকে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের প্রার্থী না করে অন্য দল থেকে আগত, অপরিচিত মানুষকে প্রার্থী করা হয়েছে হেমতাবাদে। মারাত্মক অভিযোগ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। কর্মী সমর্থকরা বলছেন, “টাকা নিয়ে প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। টাকা নিয়েছেন দেবশ্রী।”
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে চাঁদিমা রায়কে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, তিনি সিপিএম থেকে গেরুয়াশিবির যাওয়া হেমতাবাদের প্রাক্তন বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী। ক্ষোভ তাঁকে ঘিরেই। সিপিএম থেকে আগত একজনকে কেন প্রার্থী করা হল, কেন এতদিন ধরে বিজেপির হয়ে লড়াই করা কর্মীদের মধ্যে থেকে কাউকে নির্বাচনে দাঁড় করানো হল না, তাই নিয়ে বিক্ষুব্ধ বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। সমস্যা ইটাহার কেন্দ্র নিয়েও। বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। স্থানীয় বিজেপি কর্মীদের আশঙ্কা, এই কেন্দ্রেও দল বদলে আসা কোনও নেতাকে প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। ইটাহার ৩৬ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক সাধন সরকার জানিয়েছেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী টাকা নিয়ে তৃণমূল থেকে আগতদের প্রার্থী করছেন। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিতর থেকে কাউকে প্রার্থী করলে কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু তা হচ্ছে না। আর কেন ইটাহার কেন্দ্রের প্রার্থী বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হল না? তার মানে, নিশ্চিতভাবে এখানেও কোনও গোলমাল আছে।”
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শুরু হয় অসন্তোষ। ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে রাত ১১টা নাগাদ। সেই সময়ে রায়গঞ্জে বিজেপির জেলা কার্যালয়ে ঢুকে দলীয় কর্মী সমর্থকরা প্রথমে দেবশ্রী চৌধুরীর ছবিতে জুতো, লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। কার্যালয়ের আসবাবপত্র, চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকেন তাঁরা, ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার, ফ্লেক্স। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে রায়গঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছোলে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা থেকে আবারও কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে দফায় দফায় ভাঙচুর চালাতে থাকেন। সেই সময়ে কার্যালয়ের ভিতরে বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও হয়ে থাকেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, “কর্মীরা আশা করেছিলেন, তাঁদের মনোনীত কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু তালিকা ঘোষণা হতেই দেখা গেল, বাস্তবে তেমন ঘটনা ঘটেনি। আমরা কর্মীদের বোঝাতে চেষ্টা করছি। আমি ঘেরাও হয়ে বসে আছি অনেক ক্ষণ। বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। কে বলতে পারে, গেলে আমার উপরও হামলা হতে পারে।”