প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য ৮ হাজার ৪৫৮ কোটির বিমান হোক বা বাংলায় পরিবর্তন যাত্রার জন্য ‘ফাইভ স্টার’ রথ— বরাবরই বিলাসিতায় কোনও কসুর করে না গেরুয়া শিবির। এবার ভোটের মুখে দলের তরফে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের জন্য হাজির একেবারে ঝকঝকে নতুন, বিলাসবহুল একটি গাড়ি। এই বাহনে চেপেই বিজেপির হয়ে ভোট প্রচারে বেরবেন তিনি। নিউটাউনের যে আবাসনে থাকেন দিলীপ, শুক্রবার সেই আবাসনের চত্বরেই গাড়িটি সংবাদ মাধ্যমের সামনে আনেন তিনি। তাতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং নিজের ছবি দিয়ে গাড়িটি মুড়ে ফেলেছেন তিনি। নানা জায়গায় লেখা ‘সবাই মিলে লড়ব, সোনার বাংলা গড়ব’, ‘লক্ষ্য সোনার বাংলা’, ‘বদল হবে, হাল ফিরবে’র মতো বিজেপির নির্বাচনী স্লোগান। রয়েছে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষ, রামকৃষ্ণ, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ছবিও। ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথের লেখা বিখ্যাত লাইন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’।
এছাড়াও হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর মন্দির, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবিও চোখে পড়েছে গাড়িটির গায়ে। বিলাসবহুল এবং উন্নত প্রযুক্তির এই গাড়িটি উত্তরপ্রদেশ থেকে তৈরি করিয়ে আনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িটির ভিতরে আরামদায়ক সোফা রাখা রয়েছে। রয়েছে ফ্রিজ, এলইডি টিভি এবং টয়লেট। প্রচারের কাজে বেরিয়ে প্রায়শই হুডখোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করতে দেখা যায় নেতাদের। দিলীপের এই নয়া গাড়িতেও সেই ব্যবস্থা রয়েছে। তবে নজরকাড়া প্রযুক্তি রয়েছে তার জন্য। গাড়িতে একটি এলিভেটেড প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা আসলে লিফটের মতো কাজ করবে। তার ওপর দাঁড়ালেই, সেটি একদম গাড়ির ছাদে গিয়ে পৌঁছবে। সেখান থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে পারবেন নেতারা। রয়েছে মাইকের ব্যবস্থাও। ফলে চলন্ত গাড়িতে দাঁড়িয়েই বক্তৃতা করা যাবে। নিরাপত্তার জন্য গাড়িটিতে সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সংস্থা ফোর্স মোটর্সের তৈরি এই গাড়িটি টি-ওয়ান প্যাসেঞ্জার ভ্যান নামেই পরিচিত। ভারতের বাজারে এই মুহূর্তে গাড়িটি দাম ২৫ লাখের আশেপাশে। তবে দিলীপ যেহেতু বিশেষ ভাবে গাড়িটির ‘মেকওভার’ করেছেন, তাই সেই বাবদ আরও বাড়তি খরচ হয়েছে। তবে গাড়িটির কিনতে কত খরচ হয়েছে এবং সেটি সাজাতে-গোছাতে কত খরচ হয়েছে, তা খোলসা করেননি দিলীপ। বৃহস্পতিবার গাড়িটি সকলের সামনে আনার পর তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারের জন্য এই গাড়ি তৈরি করিয়েছি। এর মধ্যে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে, ঘোরার ব্যবস্থাও রয়েছে। ওপরের অংশটি রোড শো-র ডায়াসও বটে। চারদিকে রেলিং রয়েছে। ফটাফট লাগিয়ে দেওয়া যাবে। মাইক রয়েছে, তাই সেখানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়া সম্ভব হবে। রোড শো-র সময় ওখানে দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন নেতারা।’ দিলীপ আরও বলেন, ‘গাড়ির ভিতরে একটি লিফট রয়েছে। সেটি করে উপরে ওঠা যায়। ছোট বাথরুমও রয়েছে। সোফা রয়েছে, যাতে নেতারা বিশ্রাম নিতে পারেন। এলইডি স্ক্রিনের টিভিও রয়েছে। যাতে ঘোরা যায়, সভা করা যায়, সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে গাড়িটি।’ উদ্বোধনের পর এদিনই গাড়িটি আরামবাগের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।