গতবছর করোনা আবহের মধ্যেও একেবারে শেষ মুহূর্তে দলের জন্য লগ্নিকারী জোগাড় করে আইএসএলে খেলার দরজা খুললেও, মুষ্টিমেয় কয়েক জন কর্তার জন্য ফের লাল-হলুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। বিনিয়োগকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে কর্তাদের চুক্তি নিয়ে বাড়তে থাকা বিবাদে অশনি সঙ্কেত দেখছেন ইস্টবেঙ্গলের লক্ষ লক্ষ সমর্থক। যা ইঙ্গিত, সঙ্ঘাতের মূলে রয়েছে ক্ষমতা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দড়ি টানাটানি। লগ্নিকারী সংস্থা স্বাভাবিকভাবেই ক্লাবের বেশির ভাগ বিষয়ে নিজেদের হাতে রাশ রাখতে চাইবে। যে-হেতু তারাই মোটা টাকা লগ্নি করছে। ইস্টবেঙ্গলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান ক্লাবেই একই রূপান্তর ঘটেছে। কিন্তু লাল-হলুদে কর্তারা এত কাল ধরে উপভোগ করা ক্ষমতা কোনোমতেই লগ্নিকারীর হাতে ছাড়তে নারাজ।
অভিযোগ উঠছে, এঁরাই বার বার ক্লাবের স্বার্থ বিঘ্ন হওয়ার দোহাই দিয়ে চুক্তি ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা শুরুতে গাঁটছড়া নিয়ে একটিও প্রশ্ন তোলেননি। পরে তাঁরা আশ্চর্যজনক ভাবে আপত্তি শুরু করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিনিয়োগকারী সংস্থা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপরে আধিপত্য কায়েম করতে চাইছে। এর ফলে সদস্যদের স্বার্থ খর্ব হবে। তাই যত ক্ষণ না চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে তাদের সুপারিশ করা বিষয়গুলো পরিবর্তন করা হবে, তত ক্ষণ স্বাক্ষর করা হবে না।
এদিকে, বিনিয়োগকারী সংস্থা শ্রী সিমেন্টের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সামনে স্বাক্ষরিত হওয়া চুক্তিকেই মান্যতা দিতে হবে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। কেউ কেউ খোলাখুলি বলে দিলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করেছি। আমরা ক্লাবে পেশাদারিত্ব আনতে চাই। বিশ্বের কোথাও সদস্যেরা তাঁদের ইচ্ছে মতো ক্লাব তাঁবুতে ঢুকতে পারেন না। এর জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকে।’’ তাঁরা আরও বলেছেন, ‘‘ক্লাব তাঁবু ব্যবহার করা হবে খেলাধুলোর জন্য। সদস্যেরা মাঠে আসবেন খেলা দেখতে। তার পরে কেউ ইচ্ছে করলে কফি শপে যেতে পারেন। ক্লাব তাঁবুর ভিতরে তাঁদের
কী প্রয়োজন?’’
মুখ্যমন্ত্রীর সামনে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী মালিকানার ৭৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী সংস্থার। ২৪ শতাংশ ক্লাবের অধীনে। ক্লাব পরিচালনার জন্য গড়া হয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল (শ্রী সিমেন্ট ইস্টবেঙ্গল ফাউন্ডেশন) নামে অলাভজনক একটি সংস্থা। যার অধীনেই থাকবে যাবতীয় ক্রীড়া স্বত্ব। নতুন এই সংস্থার পরিচালন বোর্ডে বিনিয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে থাকবেন সর্বোচ্চ আট জন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে থাকবেন দুই প্রতিনিধি। প্রাথমিক চুক্তি প্রায় সাত মাস আগে হলেও এখনও পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের তরফে প্রতিনিধিদের নাম পাঠানো হয়নি। ইস্টবেঙ্গলে আগে লগ্নিকারী হিসেবে এসেছিল কোয়েস। শোনা যায়, কর্তাদের সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার মানসিকতায় বিরক্ত হয়ে তারা পুরো মেয়াদ শেষ করার আগেই বিদায় নেয়। যদিও খোলাখুলি তারা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। এবার ফের একই ঘটনা ঘটায় ফুটবল মহলের মত, ক্লাবের লগ্নিকারী হয়ত পাল্টেছে, কিন্তু ক্লাব কর্তাদের পুরনো রোগ এখনও সারেনি।