বারবারই অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহদের। তবে এবার তাঁদের দাবি খণ্ডন করে দিলেন খোদ এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই। মোদী সরকার ও বিজেপি যখন লাগাতার বলে গিয়েছে, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে আসছে প্রতিবেশী দেশগুলিতে, তখন দেখা যাচ্ছে, দু’বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা মাত্র ১০৪৫। নেপাল থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৬৩।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই রাজ্যসভায় লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ অথবা ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ ইন্ডিয়ান সিটিজেন অনুযায়ী ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ার কোনও কথা বলা নেই। তাই ওই দুই আইন ও বিধিতে ডিটেনশন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রশ্ন উঠছে না। এমনকী এনআরসি চালু করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, কম্প্রিহেনসিভ ইন্টিগ্রেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর কার্যকর করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজও চলছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে মোদী সরকার ও বিজেপি সর্বদাই সরব। তবে সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, বিগত দু’বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা মাত্র ১০৪৫। নেপাল থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৬৩। মোদী সরকার ও বিজেপি লাগাতার বলে গিয়েছে, মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা গৃহযুদ্ধের কারণে পালিয়ে আসছে প্রতিবেশী দেশগুলিতে। বেশ কিছু রাজ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। এমনকী বাংলার তৃণমূল সরকারকে টার্গেট করে বলা হয়েছে, রাজ্যে মায়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সবথেকে বেশি। অথচ বুধবার সংসদে পেশ করা তথ্য বলছে, গত দু’বছরে মায়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা শূন্য।
সম্প্রতি মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে সরকার নির্দেশিকা দিয়েছে যে, মায়ানমার থেকে উদ্বাস্তুদের আসা প্রতিরোধ করতে হবে। বলা হয়েছে, রাজ্যগুলির কোনও আইনি অধিকার নেই বিদেশিদের আশ্রয় দেওয়ার। মায়ানমার থেকে দলে দলে মানুষ পালাচ্ছে বিগত কয়েক বছরে। গত বছর থেকে এই পালানো আরও বেড়েছে। তারা ভারতেও ঢুকে পড়ছে। এই প্রবণতা নিয়ে প্রবল চাপানউতোরও আছে। অথচ সরকারি ভাবে সেই সংখ্যা কিন্তু সামনে নেই। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় বেজায় মুখ পুড়েছে মোদী-শাহর। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলতে যে অনুপ্রবেশকারী তত্ত্বকে হাতিয়ার করতেন তাঁরা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিবৃতিতে এবার তা ভোঁতা হল বলেই মনে করা হচ্ছে।