ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুরন্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল টিম ইন্ডিয়া। বিরাটদের মরিয়া মনোভাব রবিবার ভারতের প্রথম একাদশ নির্বাচনেই আঁচ করা গিয়েছিল। খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে জাতীয় দলের টুপি তুলে দেওয়া হয় ঈশান কিষাণ এবং সূর্যকুমার যাদবের হাতে। আনকোরা দুই প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারকে এদিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামিয়ে দিয়েছিল ভারত। দু’জনেই ভরসার সুযোগ্য দাম রাখলেন। ব্যাট হাতে ঝোড়ো অর্ধশতরান করে দলের জয় নিশ্চিত করলেন ঈশান। ফিল্ডিংয়ের সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ লুফলেন সূর্যকুমার। ইংল্যান্ডের ১৬৪ রান তাড়া করতে নেমে তেরো বল বাকি থাকতেই জয়ের লক্ষমাত্রা ছুঁয়ে ফেলে ভারত। ফর্মে ফিরতে দেখা গেল বিরাটকেও। ছয় মেরে দলকে জয় এনে দিলেন তিনি। ৪৯ বল খেলে অপরাজিত রইলেন ৭৩ রানে।
এদিন টসে জিতে ফিল্ডিং নেন ভারত অধিনায়ক। শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। তৃতীয় বলেই জস বাটলারকে ফিরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। এরপর দাউইদ মালান এবং জেসন রয় ইনিংসের হাল ধরেন। ধীরে ধীরে ভারতীয় বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসছিলেন তাঁরা। ভারতকে ম্যাচে ফেরান যুজবেন্দ্র চহালে। তাঁরই বলে সময় ছয় মারতে গিয়ে আউট হন মালান। কিছুক্ষণ পরে সুন্দরের বলে রয় ফিরে যেতেই চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ইংরেজ অধিনায়ক অইন মর্গ্যান সামান্য সময়ের জন্যে ঝড় তুললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। জনি বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকস উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ হন। ফলস্বরূপ ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে থামে ৬ উইকেটে ১৬৪-তে। ভুবনেশ্বর, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং শার্দূল ঠাকুর কেউই বেশি রান দেননি। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন প্রত্যেকেই। সুন্দর ও শার্দূল ২টি করে উইকেট নেন। ভুবনেশ্বর ও চহাল নেন ১টি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ভারত। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ হলেন কে এল রাহুল। স্যাম কারেনের বলে শূন্য রানে ফিরলেন তিনি। তবে রাহুল ফেরার পর ম্যাচের রাশ টেনে নেয় ভারত। শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকেন কোহলি। যোগ্য সঙ্গত দেন ঈশানও। ইংরেজ বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসেন তাঁরা। কারেন ভাইরা, স্টোকস, রশিদ, জফ্রা আর্চার কেউই বাদ যাননি। রশিদকে পরপর দুটি ছক্কা মেরে অর্ধশতরান পূরণ করেন ঈশান। অজিঙ্ক রাহানের পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয়, যিনি দেশের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই অর্ধশতরান করলেন। উল্লেখ্য, রবিবার রাতে ঈশানকে দেখে মনেই হয়নি তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। যে ভাবে বেন স্টোকসকে পুল করে এবং আদিল রশিদকে সুইপ করে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকালেন, তাতে ঈশানের পরিণত মানসিকতাটা পরিষ্কার বোঝা গেল। নন-স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে থাকা কোহলিকেও দেখা গেল বারবার এগিয়ে এসে ঈশানের পিঠ চাপড়ে দিতে।
৩২ বলে ৫৬ রান করে আউট হন ঈশান। এরপর আর ভারতকে আটকানো যায়নি। পুরনো মেজাজে দেখা গেল বিরাটকে। ইংরেজ বোলারদের আগাগোড়া শাসন করলেন। টম কারেনকে ছক্কা মেরে অর্ধশতরান পূরণ করলেন। স্বভাববসিদ্ধ ভঙ্গিমায় ২৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে যান ঋষভ পন্থ। তিনি যখন ফিরলেন, তখন ম্যাচ কার্যত হাতের মুঠোয় ভারতের। ১৮ নম্বর ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে জর্ডনকে চার এবং ছয় মেরে জয় নিশ্চিত করেন বিরাট। পাশাপাশি গড়লেন নতুন নজিরও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক ছুঁলেন তিনি। ম্যাচের সেরা হয়েছেন ঈশান কিষাণ।