ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার বিপ্লবীদের অবদান অনস্বীকার্য। ইংরেজদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে সামিল হওয়া যে সকল বর্ণময় চরিত্রকে ‘কালাপানি’ পেরিয়ে আন্দামানের সেলুলার জেলে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল তাঁদের মধ্যে সিংহভাগ ছিলেন বাঙালিরাই। সুশীল সেন, যতীন্দ্রনাথ দাস, বারীন্দ্র ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত – তালিকা অনেক লম্বা। ছিলেন সুবোধ রায়, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, অম্বিকা চক্রবর্তীর মতো চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের আগুনখেকো নায়করা। অথচ স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পালন মহোৎসবের মেগা সরকারি কর্মসূচীর সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের বিভিন্ন প্রান্তের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বীর শহীদদের নাম উল্লেখ করলেও একমাত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছাড়া বাংলার কোনও বিপ্লবীর নাম মুখেও আনলেন না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুক্রবার স্মরণ করলেন, ভগৎ সিং থেকে চন্দ্রশেখর আজাদকে। রামপ্রসাদ বিসমিল থেকে আশফাকউল্লা খান। গুরু রাম সিং থেকে পাল রামস্বামী। চকরা বিশাই থেকে লক্ষণ নায়েক। মাইয়াম বিরুড্ডু অথবা আল্লুরি সিরারাম রাজু। পাসালথা চেরা কিম্বা গোমধন কনবারকে। দেশের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহান বলিদানকে স্মরণ করে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধও করলেন তিনি। কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু থেকে প্রফুল্ল চাকী। বাঘা যতীন থেকে বিনয় বাদল দীনেশ অথবা মাস্টারদা সূর্য সেনের মতো বাংলার বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের তালিকায় উচ্চারিত হল না।
প্রধানমন্ত্রী একমাত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ করেছেন তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনী কীভাবে আন্দোলন করেছিল, সেই গৌরবজ্জ্বল কাহিনী। মোদী বলেন, নেতাজি নিজে আন্দামানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পালনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন প্রান্তের বিদ্রোহ ও আন্দোলনের উল্লেখ করেছেন গুজরাতের ওই সভায়। সন্ন্যাসী আন্দোলন থেকে চুয়াড় বিদ্রোহ। বরদোলি সত্যাগ্রহ থেকে চম্পারণ আন্দোলন। সম্বলপুর থেকে বুন্দেল সংঘর্ষ। কিন্তু এই বীরগাথাগুলির পাশাপাশি মেদিনীপুরে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার গঠনের উল্লেখও তাঁর ভাষণে ছিল না।
১৯৪২ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীন সরকার গঠনের আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু অন্তত প্রথম দিনের এই সূচনা পর্বে বিশেষভাবে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম উঠে আসেনি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। যদিও ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, বাবাসাহেব আম্বেদকরদের পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেছেন ব্রিটিশদের মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাওয়া বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নাম। উল্লেখ্য, গান্ধীর ডান্ডি যাত্রার ৯১ তম বর্ষে শুক্রবার দেশের মধ্যে গুজরাতকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পালন মহোৎসবের মেগা সরকারি কর্মসূচীর শুভারম্ভের জন্য। আগামী এক বছর ধরে স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপালন কর্মসূচী পালিত হবে। দেশের প্রতিটি রাজ্যেই এই কর্মসূচী পালিত হবে।