প্রাক-ভোটপর্বে ফের বিপাকে গেরুয়াশিবির। হলদিয়ায় আদি কর্মীদের অসন্তোষের জেরে কার্যত প্রচারেই নামতে পারছেন না দলবদলকারী বিজেপি প্রার্থী তাপসী মণ্ডল। প্রার্থীকে নিয়ে শিল্পশহরে আদি ও নব্যদের মধ্যে বিরোধ দিনদিন বাড়ছে। দুর্গাচক টাউনে নিজের পরিচিত এলাকায় প্রচারে গিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁর দলবদল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ভোটে ত্রিমুখী লড়াই হবে। কিন্তু, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তৃণমূল প্রার্থী স্বপন নস্করের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মনিকা কর পাইকের। তেমনটাই ইঙ্গিত রাজনৈতিক মহলের।
উল্লেখ্য, বিজেপির আদি কর্মীদের অভিযোগ, প্রার্থী তাপসী মণ্ডল এখনও বাড়ি বাড়ি ভোট প্রচারের পরিবর্তে বিভিন্ন পার্টি অফিসে গিয়ে সংবর্ধনা নিচ্ছেন। ফুলের মালা ও হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে তাঁর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হচ্ছে। ভাবখানা এমন, লড়াইয়ে নামার আগেই যেন জিতে গিয়েছেন। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। সিপিএম থেকে আসা দলবদলকারী কয়েকজন নেতা-কর্মী ছাড়া তাঁর সঙ্গে আর কেউ তেমন থাকছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনকয়েক আগে হলদিয়া উদ্বাস্তু কলোনি ক্ষুদিরামনগরে দলবদলু এক নেতার সঙ্গে প্রচারে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। এক বিজেপি কর্মী বলেন, প্রার্থীকে নিয়ে তাঁর নিজের ওয়ার্ডে ঘোরার সময় দলবদল নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছেন। উনি সেখানে কোনও উত্তর দিতে পারছেন না। কারণ সিপিএম তাঁকে দল থেকে তাড়ায়নি। উনিই নিজে দল ছেড়েছেন এবং প্রার্থী হয়েছেন। প্রশ্নের মুখে পড়ে আমাদের কার্যত পালিয়ে মুখরক্ষা করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে হলদিয়ার এক বিজেপি নেতার ক্ষোভ, “দলবদলুকে প্রার্থী করেই এগিয়ে থাকা আসনে আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। শুধু কর্মী-সমর্থক নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কারণ তৃণমূলের যে নেতাদের উপর মানুষের ক্ষোভ ছিল, তাঁরাই দলবদল করে আমাদের দলে এসেছেন। ফলে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী হবে ওপরওলাই জানেন।” তবে, এই বক্তব্য মানতে নারাজ হলদিয়ার নব্য বিজেপি নেতা শ্যামল মাইতি। তিনি বলেন, “দল প্রার্থীকে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে জোর দিয়েছে। বিরোধীরা বিজেপিকে নিয়ে অপপ্রচার করছে। হলদিয়ায় লড়াইয়ে বিজেপিই এগিয়ে। শিল্পশহরের শ্রমিক কর্মচারী, কারখানার আধিকারিক, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তি চাইছেন। তাঁরা বলেন, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল রাজ্য সহ সমগ্র পূর্ব ভারত। লকডাউন ও করোনার জেরে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পে প্রভাব পড়েছে। তা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব চাই।”
দুর্গাচকের ব্যবসায়ী ইমদাদুল ইসলাম বলেন, এখানের বিধায়ক হিসেবে আমরা নতুন মুখ চাই। যিনি হলদিয়ার সমস্যার কথা তুলে ধরবেন, মানুষকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করবেন। আত্মবিশ্বাসী হলদিয়ার তৃণমূল প্রার্থী স্বপন নস্কর। “প্রচারে গিয়ে বুঝতে পারছি, হলদিয়ায় এবার লড়াই হবে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের। কারণ দলবদলের রাজনীতি হলদিয়ার মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছেন না। দলবদল করা নেতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভই এবার আমাদের সুবিধে করে দিয়েছে।” জানিয়েছেন স্বপনবাবু।