দেখতে দেখতে ৩ মাস হয়ে গেল। এই মুহূর্তে গরম পড়তে শুরু করেছে দিল্লী, পাঞ্জাব, হরিয়ানায়। নভেম্বরে যখন কৃষকদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তখন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি ছিল। এখন তা ৩০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়তে নারাজ আন্দোলনরত কৃষকরা। আন্দোলনে যোগ দেওয়া পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা জেলার গোবিন্দপুরা গ্রামের জসবিন্দর সিংহ বলছেন, গুরু গোবিন্দ সিংহ বলছেন, চিড়িয়ো সে বাজ লড়ায়ুঁ, সওয়া লাখ সে এক লড়ায়ুঁ, তভি গোবিন্দ সিংহ নাম কহায়ুঁ। অর্থাৎ চড়াই পাখি দিয়েই বাজপাখির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। সওয়া লক্ষের বিরুদ্ধে একজন লড়বে। তবেই তাঁর নাম গুরু গোবিন্দ সিংহ। তাঁর সাফ কথা, ‘পাঁচ জন গ্রামে ফিরে গেলে পাঁচ হাজার আসবেন। আমরা ২০২৪ পর্যন্ত বসে থাকব।’
প্রসঙ্গত, দিল্লী-হরিয়ানা সীমানার টিকরি বর্ডার এখন আক্ষরিক অর্থেই ‘বর্ডার’-এর চেহারা নিয়েছে। যেমন রয়েছে লোহার ব্যারিকেড, কংক্রিটের চাঙর, কাঁটাতার, তেমনি চলছে সিআইএসএফ, সিআরপিএফ, র্যাফ, দিল্লী ও হরিয়ানা পুলিশের পাহারা। হাঁটার পথও বন্ধ। মেট্রো স্টেশন থেকে ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ পেরিয়ে একশো মিটার দূরে কৃষকদের প্রতিবাদ মঞ্চ। ২৬ নভেম্বর দিল্লী সীমানায় তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন কৃষকেরা। আজ তিন মাস পূর্ণ হল। কিন্তু সিংঘু-টিকরি-গাজিপুর এখনও অবিচল। ভিড় কমেছে ঠিকই। কিন্তু সে শুধুই পাঞ্জাব-হরিয়ানায় চাষের জমিতে গম তোলার মরসুম এসে গিয়েছে বলে।
মেট্রো লাইনের নীচে রাস্তা ধরে ১০-১৫ কিলোমিটার শুধুই ট্র্যাক্টর-ট্রলি, তাঁবু। খান দশেক ট্র্যাক্টর-ট্রলি ঘিরে এক একখানি ‘পিন্ড’ বা গ্রামের নাম। তার সঙ্গে ট্রলিতে মাথা গুঁজে থাকা এক একটি বড় পরিবার বা ‘কুনবা’-র নাম। জসবিন্দরের গ্রামেরই বাসিন্দা গলবন্ত সিংহ বলেন, ‘আমরা দুই বুড়ো এখানে বসে রয়েছি। বাড়ির ছেলেপিলেরা চাষের কাজ করছে। গ্রামে গ্রামে কমিটি তৈরি হয়েছে। আমরা টিকরি, সিংঘুতে এসে বিক্ষোভে বসলে, গ্রামের অন্য লোকেরা ফসল কেটে ঘরে তুলে দেবে। এক পয়সাও নেবে না। ট্র্যাক্টরের ডিজেল খরচও না। প্রতিটি কুনবার অন্তত একজন বিক্ষোভে থাকবে। মোদী সরকার যদি ভাবে, আমরা ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাব, তা হলে ভুল ভেবেছে।’
উল্লেখ্য, দু’দিন আগে টিকরির প্রতিবাদ মঞ্চের আশেপাশে পুলিশের নোটিস পড়েছে। পুলিশের হুঁশিয়ারি, জমায়েত তুলতে হবে। এই জমায়েত বেআইনি। এ প্রসঙ্গে বারনালা জেলার হরজিন্দর সিংহ বলেন, ‘পুলিশে তো আমাদেরই ছেলেপিলে। ওপরওয়ালার নির্দেশ। তাই নোটিস টাঙিয়েছে। ওরাও জানে, আমরা হঠব না। আমার মেয়ে-জামাই কানাডা থেকে এসে ঘুরে গিয়েছে। বলেছে, বাবা, তুমি পিছু হঠবে না। মেয়ের কথা শুনব, না মোদীর?’ শীত না হয় লেপ-কম্বল জড়িয়ে, আগুন জ্বালিয়ে কেটে গেল। গ্রীষ্মের চাঁদিফাটা রোদে কীভাবে দিনের পর দিন বসে থাকবেন তাঁরা? হরজিন্দর বলেন, ‘ফ্যান, কুলার, এসি, সব চলে এসেছে। রাস্তার মাঝখানে তাঁবু তৈরি হচ্ছে। আমরা গমের খেতে মাথায় রোদ নিয়ে বসে থাকি। এখানে মেট্রো লাইনের নীচে বসে থাকতে পারব না?’