মরশুম শেষে মাঠ এবং মাঠের বাইরে- দুই জায়গাতেই রীতিমত বিপর্যস্ত লাল-হলুদ। গত মঙ্গলবার আইএসএলে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে ১-২ হারের যন্ত্রণার মধ্যেই এবার গতকাল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কড়া শাস্তির মুখে পড়ল এসসি ইস্টবেঙ্গল। গত মরশুমে চুক্তি অনুযায়ী অর্থ না পেয়ে প্রথমে আগের বিনিয়োগকারী সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন পিন্টু মাহাতো, রক্ষিত দাগার, অভিষেক অম্বেকর-সহ ইস্টবেঙ্গলের সাত ফুটবলার। কিন্তু তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যে-হেতু ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তাই ফুটবলারদের বকেয়া মেটানোর দায়িত্ব এখন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবেরই। বিনিয়োগকারী সংস্থার কোনও দায় নেই।
এর পরেই সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ফুটবলারেরা। অভিযোগ করেন ভারতের ফুটবলারদের সংস্থার কাছেও। ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারা সেই সময় স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, আগের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদের চুক্তিতে কী রয়েছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি লেখা থাকে আর্থিক কোনও দায় আর বিনিয়োগকারী সংস্থার নেই, তা হলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকেই যাবতীয় বকেয়া মেটাতে হবে। জানা গিয়েছে, ক্রীড়া স্বত্ব ফেরত দেওয়ার সময় আগের বিনিয়োগকারী সংস্থা শর্ত দিয়েছিল, বকেয়া মেটানোর দায়িত্ব নিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকেই।
এখানেই শেষ নয়। ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়াতেও ফেডারেশনকে মুচলেকা দিয়ে ইস্টবেঙ্গল জানিয়েছিল, গত মরশুমের বকেয়া তারাই মেটাবে। এর পরে পিন্টুদের ক্লাব কর্তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী আগামী মরশুমেও তাঁদের রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু চুক্তির অঙ্ক অর্ধেক করতে হবে। সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ফেডারেশনের শরণাপন্ন হন পিন্টু, অভিষেক-রা। তার পরেই ভারতের ফুটবল নিয়ামক সংস্থা চিঠি দেয় ইস্টবেঙ্গলকে।
লাল-হলুদের নতুন বিনিয়োগকারী সংস্থার কর্তাদের দাবি, অভিষেক ও সামাদ আলি মল্লিকের সঙ্গে চুক্তি করে সমস্ত বকেয়াই মিটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জটিলতা অব্যাহত পিন্টুদের নিয়ে। প্রতিশ্রুতিমান বাঙালি মিডফিল্ডার এই মরসুমে দিল্লির সুদেবা এফসি-র হয়ে আই লিগে খেলছেন। পিন্টুর দাবি, তাঁর বকেয়া এখনও মেটানো হয়নি। সূত্রের খবর, বুধবারই ফেডারেশনের তরফে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে বকেয়া মেটাতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ অমান্য করলে নতুন ফুটবলার সই করানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। জানা গিয়েছে, বকেয়া অর্থের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
বকেয়া কবে মেটানো হবে? বিনিয়োগকারী সংস্থার তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চূড়ান্ত টার্মশিটে সই না করলে তাঁরা বকেয়া মেটাবে না। কেউ কেউ খোলাখুলি বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছি। তাই চূড়ান্ত চুক্তিতে সই না হলে আমাদের কোনও দায় নেই। ইস্টবেঙ্গলকেই বকেয়া মেটাতে হবে।’’ ফেডারেশনের এই চিঠি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকেও পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, মার্চ মাসের দ্বিতীয় বা সপ্তাহে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দুবাই থেকে কলকাতায় আসতে পারেন বিনিয়োগকারী সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর হরিমোহন বাঙুর।