বাংলায় ভোটের মুখে যখন ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের গুণাগুণ বোঝাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরের নেতা-মন্ত্রীরা, তখন খোদ কেন্দ্রীয় রিপোর্টেই মুখ পুড়ল তাঁদের। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বেকারত্বের হারে দেশের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের ত্রিপুরা। এই হার দেশের গড় বেকারত্বের প্রায় দ্বিগুণ। সম্প্রতি রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত তথ্যও পেশ করেছে শ্রমমন্ত্রক।
স্ট্যাটিস্টিকস অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রকের আওতায় ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে দেশ জুড়ে বার্ষিক পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (পিএলএফএস) করেছে। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বেকারত্বের জাতীয় হার ৫.৮ শতাংশ। আর ত্রিপুরায় এই পরিসংখ্যানই ১০ শতাংশ। অথচ, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে পিএলএফএস সমীক্ষায় ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার ছিল ৬.৮ শতাংশ।
উল্লেখযোগ্যভাবে, লাগাতার বাংলাকে কর্মসংস্থান নিয়ে দুষে গেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে কিন্তু বেকারত্বের হার ৩.৮ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে তা ছিল ৪.৬ শতাংশ। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনঘনত্ব হওয়া সত্ত্বেও। অর্থাৎ, বাংলায় বেকারত্বের হার এক বছরে কমেছে। নজর করার মতো বিষয় হল, ওই অর্থবর্ষেও বাংলায় বেকারত্বের পরিসংখ্যান জাতীয় গড়ের (৬ শতাংশ) থেকে ভালো ছিল।
প্রসঙ্গত, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বাংলায় গিয়ে বারবার ত্রিপুরার ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের প্রসঙ্গ টানছেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নাড্ডারা। উদ্দেশ্য একটাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে অযোগ্য প্রমাণ করা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্র এবং রাজ্য দু’টি ক্ষেত্রেই একই দলের সরকার থাকলে উন্নয়ন অনেক দ্রুতগতিতে এবং মসৃণভাবে হবে। এমনকী সদ্য তৃণমূল থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়ে দলবদলুরাও দাবি করছেন, উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্র এবং রাজ্যে এক দলের সরকার থাকা জরুরি।
যদিও নেতারা মুখে যা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টই তার সঙ্গে মিলছে না। বরং সরকারি তথ্যেই স্পষ্ট যে, বাংলায় কর্মসংস্থান বহু রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকী, যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, সেই তালিকাতেও সবার আগে রয়েছে বাংলা। অর্থাৎ মমতার রাজ্যে বেকারত্বের হার ভোট-রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের পিএলএফএস সমীক্ষা অনুযায়ী, কেরালায় বেকারত্বের হার ৯ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ৬.৬ শতাংশ। পুদুচেরিতে এবং ৮.৩ শতাংশ। আর একটি ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের আসামও বাংলার থেকে পিছিয়েই। সেখানে বেকারত্বের হার ৬.৭ শতাংশ।