তরতরিয়ে এগোচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। ১লা ডিসেম্বর থেকে দুয়ারে সরকার পর্বে রোজ কমবেশি চার হাজার করে ফোন এসেছে স্বাস্থ্যসাথী হেল্পলাইনে। কারও সমস্যা স্মার্ট কার্ড নিয়ে, কেউ বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন, কেউ আবার পরিবারের কোনও সদস্যের নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে ফোন করেছেন। সব সমস্যারই সমাধান হয়েছে। এমনটাই দাবি করছেন স্বাস্থ্যসাথী সেলের পদস্থ কর্তারা।
প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি পুরনো। ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল শুরু। তখন থেকেই স্বাস্থ্যসাথী কল সেন্টার চলছে। তখন প্রতিদিন ফোন আসত ৩০০-৪০০টি। তিন শিফটে চলে এই সেন্টার। প্রতিটি শিফটে পাঁচটি করে ডেস্ক রয়েছে। সম্প্রতি মমতা সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ঘোষণা করায় পরিস্থিতি আমূল পাল্টেছে। এখন প্রতিদিন ফোন আসছে কমপক্ষে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার। ১৮০০৩৪৫৫৩৮৪ নম্বরে আসা এত ফোন সামাল দিতে কল সেন্টারে ডেস্কের সংখ্যা বাড়িয়ে চারগুণ করেছে স্বাস্থ্যভবন। এক-একজন কর্মী দিনে সামলাচ্ছেন কমপক্ষে ৩০০ করে ফোন। রীতিমতো হিমশিম অবস্থার সম্মুখীন তাঁরা।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, ১লা ডিসেম্বর থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি— এই সময়কালে কার্ড দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮৫ লক্ষ পরিবার বা ১০ কোটিরও বেশি মানুষকে। দিনে এখন ছ’ থেকে সাত কোটি টাকার চিকিৎসা পাচ্ছেন রাজ্যবাসী। গড়ে ৩ হাজার ৬০০ জন মানুষ এই কার্ডের বিনিময়ে প্রতিদিন চিকিৎসা পাচ্ছেন। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই সংখ্যাটি সাড়ে চার হাজারও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ছোটোখাটো সমস্যা থেকে শুরু করে রোগী ভর্তি নিয়ে হয়রানি, দিনরাত সব ধরনেরই ফোন আসছে স্বাস্থ্যসাথী কল সেন্টারে।
উল্লেখ্য, গতরবিবার হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে নানা সমস্যার কথা জানিয়ে ফোন এসেছিল ৭৮২টি। এর মধ্যে ৭২১টি ফোনেরই সমাধান করেছে কল সেন্টার। ‘জেনারেল এনকোয়ারি’র জন্য ফোন এসেছিল ৯৭৩টি। স্বাস্থ্যসাথী স্মার্ট কার্ড সংক্রান্ত নানা বিষয়ে অভাব ও অভিযোগ বা কৌতূহল মেটাতে ফোন আসে ১ হাজার ৯৮৭টি। সব সমস্যারই সুরাহা হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, এমন কোনও পরিষেবা নেই, যেখানে ছোটখাট সমস্যা হয় না। আসল কথা হল, সমস্যাগুলির সমাধান হচ্ছে কি না। স্বাস্থ্যসাথীতে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন, অসুবিধা হলে তার প্রতিকারও করছে কল সেন্টার।
স্বাস্থ্যসাথী সেলের এক আধিকারিক জানান, হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে অভিযোগ এলে আমাদের কল সেন্টারের কর্মীরা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা দূর করছেন। যদিও দেখা যায়, ওই হাসপাতালে সত্যিই বেড নেই, সেক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। এই প্রকল্প নিয়ে এখন হাসপাতালগুলির মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা অনেকটাই কমেছে। বাধা আসছে চিকিৎসকদের একাংশ থেকে। সবমিলিয়ে ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখেছে স্বাস্থ্যসাথী।