বাংলায় আর ক’দিন পরেই বেজে যাবে ভোটের বাদ্যি! ইতিমধ্যেই প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে রাজ্য সফরে আসছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা- কেউই বাদ যায়নি এই বাংলা সফর থেকে। যেহেতু, ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার রাজ্যে এসেছেন, তাই আজ রাজ্যবাসীরও আশা ছিল তিনি এখানে এসে বাংলার জন্য কিছু ঘোষণা করবেন। নিদেনপক্ষে যে জেলার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি সভা করছেন, অন্তত সেখানকার জন্য কিছু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করবেন।
কিন্তু তিনি তো সে রাস্তায় হাঁটার বান্দাই নন। উল্টে আজ হুগলির ডানলপে সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই বাংলা আর তৃণমূলের নিন্দামন্দই করে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। ভোটের মুখে এসে তৃণমূলকে আক্রমণের তবু না হয় কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার উদ্দেশ্যে এহেন বদনাম কেন! বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলার এভাবে বদনাম করলে বাঙালিদের ভোট আদৌ পাবে তো গেরুয়া শিবির, কার্যত সেই প্রশ্নই এদিন উঠে গেল ডানলপের মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভা করে যাওয়ার পরে।
এদিন নিজের ভাষণে একের পর এক মিথ্যে লাগামহীন ভাবে বলে গেলেন মোদী। তারপরই তাঁকে কটাক্ষ করে পাল্টা জবাব দিল তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম ভবনের রক্ষণাবক্ষণে নজর দেয়নি কেউ। এমনকি বাংলার মাটিতে দুর্গাপুজোর ভাসানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেই বক্তব্যের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তৃণমূল জিজ্ঞাসা করেন, প্রধানমন্ত্রী কী জানেন না বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মস্থান নৈহাটিতে তাঁর বাড়ি এখন বঙ্কিম গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এমনকি বাংলায় কবে দুর্গাপুজোর ভাসান বন্ধ করে দেওয়া হল, সেই প্রশ্নও তুলেছে জোড়াফুল শিবির।
এছাড়াও আজ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলার লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। তৃণমূলের তরফে এর পাল্টা দিয়ে বলা হয় যে, আয়ুষ্মাণ ভারত চালু করতে তো রাজ্য সরকার কোনও বাধা দেয়নি। এই প্রকল্প চালু হলে রাজ্যের মাত্র দেড় মানুষ তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবায় কিছুটা সুবিধা পাবেন মাত্র। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প তো গোটা রাজ্যবাসীর চিকিৎসা পরিষেবাকে বিনামূল্যে করে দিয়েছে। কোনটা বেশি লাভবান সেটা মানুষ কী একটু বিচার করবেন!
এমনকি মোদীজির দাবি অনুযায়ী কোন বছরে কেন্দ্র বাংলায় ঘরে ঘরে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য ১৭০০কোটি টাকা দিয়েছেন, তাও জানতে চেয়েছে তৃণমূল। মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এই প্রশ্ন করেছে তাঁরা। এরপর তৃণমূলের তরফে বলা হয়, বাংলা যদি এত খারাপ আর বাংলায় যদি চাকরি-বাকরি, শিল্প না থাকে তাহলে দলে দলে অন্যান্য রাজ্য থেকে মানুষ কলকাতা আর তার আশেপাশে এখানে এসে ঘরবাড়ি কিনে বসবাস করতে শুরু করে দিচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের জবাব কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেবেন? বস্তুত যে হারে এদিন প্রধানমন্ত্রী বাংলার নিন্দে করে গেলেন তা রাজ্যবাসীকে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। যা বিধানসভা ভোটের আগে হয়ত কিছুটা ব্যাকফুটেই ঠেলে দিল পদ্মশিবিরকে।