রাজ্যের শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর বুধবার আকস্মিক বোমা-হামলার পর তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে তদন্ত। কলকাতায় আসার জন্য নিমতিতা স্টেশনে কখন পৌঁছবেন রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেন, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল হামলাকারীদের কাছে। পরিকল্পনা মতোই বিস্ফোরণের ছক কষেছিল তারা। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নমুনা সংগ্রহের পর এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, বোমা অত্যন্ত দক্ষ হাতে তৈরি করা হয়েছে, যাতে অনেকের প্রাণহানি ঘটে। সে কারণেই বন্দুক ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, জাকিরকে কেন নিশানা করা হল ? সম্ভাবনাময় নানা দিক খতিয়ে দেখছে সিআইডি এবং রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স।
কিন্তু এখনও নির্দিষ্ট কোনও তথ্যপ্রমাণ হাতে আসেনি তাঁদের। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি রেল পুলিশ (জিআরপি)-ও তদন্ত করছে। কারণ গোটা ঘটনাটি ঘটেছে নিমতিতা স্টেশনে প্ল্যাটফর্মের উপরে। সেই সঙ্গে রেল সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ)-র নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জাকির এখন ভর্তি রয়েছেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, জাকিরের হাতের একটি আঙুল এবং বাঁ পা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুর্শিদাবাদ থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় জখম আরও ১৪ জনকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। আহত সকলেই জাকিরের অনুগামী।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেখানে তিনি বলেন, “হিংসা সমাধানের পথ নয়। আমাদের সমাজে হিংসার কোনও জায়গা নেই। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এই ঘটনা আমাদের সমাজের পক্ষে লজ্জার। রাজ্য বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে।” বৃহস্পতিবারই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিআইডি-র আধিকারিকরা। নিমতিতা স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের রেললাইনে নেমেও তথ্যতলাশ করেন তাঁরা। পুলিশ-কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। নমুনা সংগ্রহ করেছে বম্ব স্কোয়াড এবং ফরেন্সিক বিভাগ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে, বোমার মশলা হিসাবে কী ব্যবহার করা হয়েছিল। যে ভাবে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তা থেকে মনে করা হচ্ছে, ওই বোমা আকারে অনেক বড় ছিল। তাতে মশলার পাশাপাশি স্প্লিন্টারের পরিমাণও বেশি ছিল। জাকিরের অনুগামীদের দাবি, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটনো হয়েছে। পৈলানের সভা থেকে একই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘শুনছি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ হয়েছে। কিছু দিন ধরে জাকিরকে অনেকে পরোক্ষ ভাবে বলছিল, চলে এসো, চলে এসো, চলে এসো। কিন্তু ও নিবেদিতপ্রাণ। ও যাবে কেন?” মমতার ইঙ্গিত বিজেপি-র দিকেই বলে মনে করা হচ্ছে।
জাকিরের উপর হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং অন্তর্ঘাতের তত্ত্বের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী নিমতিতা এলাকায় গরুপাচার চক্রের যোগসাজশও টেনে এনেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁর মতে, “জাকিরের সঙ্গে কখনও গরুপাচার নিয়ে, কখনও পুরসভা নিয়ে সঙ্ঘাত বেধেছে। জাকির সৎ এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। নিজের জনপ্রিয়তায় তিনি জয়ী হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে আমার আবেদন, কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, পুলিশ দিয়ে জানতে ১০ মিনিট সময় লাগবে।” প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার বিরুদ্ধে একাধিক বার মুখ খুলেছিলেন জাকির। রঘুনাথগঞ্জ থানায় এফআইআর-ও করেন তিনি।
যদিও পুলিশের অনুমান, আগে থেকেই স্টেশনে বোমা মজুত করে রাখা ছিল। স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সাধারণ ভাবে আলো কম থাকে। ঘটনাচক্রে বুধবার রাতে ওই প্ল্যাটফর্মের সমস্ত আলো বন্ধ ছিল। কোন সময়ে জাকির প্ল্যাটফর্মে পৌঁছবেন, তা আগে থেকেই জানত চক্রান্তকারীরা। অন্য দিকে বিস্ফোরণের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনাকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পেয়েছেন শরদকুমার দ্বিবেদী। তিনি কর্মরত ছিলেন স্বাস্থ্য দফতরে।