একই দিনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় সভা। অমিত শাহের জবাবী সভায় চেনা ভঙ্গিতেই ধরা দিলেন মমতা। বললেন কে প্রার্থী দেখার দরকার নেই ২৯৪ টি আসনে আমি প্রার্থী। মমতার কথায়, এবারের লড়াই বিজেপির অহংকার ভাঙার লড়াই। জনতার কাছে মমতার আর্জি, আগের মতোই এবারেও ৩১-০ করতে হবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়।’
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শক্ত ঘাঁটি। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতাতেই গত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। আর বিধানসভা যত এগোচ্ছে সেই অভিষেককেই নিশানা বানাচ্ছে বিজেপি। তাই আজ মমতার বক্তব্যেরও অনেকটা জুড়ে ছিলেন অভিষেক। অমিত শাহর নাম না করে মমতা বলেন, অভিষেকের নাম নেওয়ার আগে তোমার ছেলের কথা বলো, সেও আমার ভাইপো। পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ, ‘আগে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়ে দেখাও।’ এমনকি সভার শেষে অমিত শাহ চ্যালেঞ্জ করছি তোমার ছেলেকে রাস্তায় নামাও।
অমিত শাহ এদিন সাগর-সভায় বলে এসেছেন তাঁদের রাজত্বে সরস্বতী পুজো, দুর্গাপুজো করা যাবে নিশ্চিন্তে। বার্তাটা যেন ছিল, এই পুজোগুলি মমতা জমানায় করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। মমতা জবাবে বললেন, ‘সরস্বতী পুজো করতে দেয় না বলছে, সরস্বতী সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না (এই সময়ে সরস্বতীর মন্ত্রপাঠও শুরু করেন মমতা)। দুর্গাপুজা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাহলে ক্লাবগুলিকে ৫০ হাজার টাকা কেন দেওয়া হচ্ছে?’
প্রসঙ্গত এদিন অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন যারা সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়েছিলেন তারা সোনার উত্তর প্রদেশ গড়তে পারল না কেন? উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের নাম নিলেন মমতাও। সেখানে সম্প্রতি মৃত্যু হওয়া দুই দলিত কন্যা সম্পর্কে বললেন, ‘যে বাচ্চা মেয়েগুলিকে অত্যাচার করা হয়েছে তাই নিয়ে কেন কোনও কথা বললেন না।’ এল লাঞ্চ পলিটিক্সের কথাও। শাহ ভোজ এদিন ছিল জনৈক মৎস্যবিক্রেতার দ্বারে। মমতা বললেন, ও’টা কোটি কোটি টাকা নিয়ে ফাইভস্টার পলিটিক্স, সবটাই বানানো। ‘নাম না করে সম্ভবত সুজাতা-সৌমিত্র খাঁ প্রসঙ্গও আনলেন মমতা। বললেন, ‘ওঁরা ঘরে ঘরে, স্বামী স্ত্রীর ভাগ করে হিন্দু মুসলমান সবে ভাগ করে দেয়।’
নিজেকে এদিনও তৃণমূল স্তরের রাজনৈতিক কর্মী বললেন মমতা। রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটাই তাঁর ইউএসপি, নীচুতলার মন পেতে চিরকাল এই হাট-মাঠের রাজনীতিই করে এসেছেন মমতা। আজ যেমন বলছিলেন, আমি নেতা নই, একজন সাধারণ তৃণমূল কর্মী। আমি আজও একজন ছাত্র নেত্রী। আমার সঙ্গে লড়া অত সহজ নয়। বিধানসভার ফল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মমতা তুলে আনলেন পাঞ্জাবের মিউনিসিপ্যালিটি ভোটের প্রসঙ্গও। বললেন, ‘পাঞ্জাবে সাফ হবে। ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশেও যাবে।’ এদিনও তাঁর স্পষ্ট বার্তা, এনআরসি, এনপিআর করতে দেবো না।
এ দিন মমতা কথাচ্ছলে আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন অভিষেককে নিয়ে। বলেন, আমার জন্য ওকে কথা শুনতে হয়। ও একটা চোখে আজও দেখতে পায় না। আমার বাড়ির ছোটদের, বউদের গালি গেবে না। অভিষেক লড়ে লোকসভায় জিতেছে, কিছুই তাঁকে পাইয়ে দেওয়া হয়নি, স্মরণ করিয়ে মমতা অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে বললেন, জয় শাহকে পারলে মাঠে নামাতে।