আগেরবার এসেই অমিত শাহ হাঁক দিয়েছিলেন, ‘আবকে বার ২০০ পার’। প্রধানমন্ত্রী বলে গিয়েছেন, মমতার সরকারকে এবার লালকার্ড দেখাবে বাংলার জনতা। গেরুয়া শিবিরের বাকি নেতারাও এই বুলি আউড়াচ্ছেন যে, মমতা যাচ্ছে, বিজেপি আসছে। কিন্তু বাস্তব অন্য কথাই বলছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, বাংলায় ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই ফিকে হচ্ছে গেরুয়া ক্রেজ। বিজেপির পাশ থেকে সরে যাচ্ছে রাজ্যের মানুষ। যেমন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দাবি ছিল, নাগরিকত্ব নিয়ে অমিত শাহের বার্তা শুনতে লাখ দুয়েক লোক আসবেন মাঠে। কিন্তু পুলিশ ও স্থানীয় বিজেপি নেতাদের হিসেবে হাজার ২৫-এর বেশি লোক হয়নি শাহের সভায়। প্রত্যাশিত উচ্ছ্বাসও চোখে পড়েনি উপস্থিত মতুয়াদের মধ্যে। উল্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর ক্ষোভ বাড়ল মতুয়াদের।
কথা ছিল ঠাকুরনগরে এসে প্রথমে হরি-গুরুচাঁদ মন্দিরে পুজো দিয়ে সভায় আসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে মন্দিরে না গিয়ে সোজা সভামঞ্চে পৌঁছে গেলেন তিনি। বিকেল ৫.১৮ মিনিটে সভা শেষ করে মতুয়াদের আরাধ্য দেবতার মন্দিরে গেলেও, মিনিট দুয়েকের বেশি থাকেননি অমিত। উল্টে মতুয়াধামের সভামঞ্চ থেকে হরিধ্বনি না দিয়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে বিতর্ক বাড়ালেন অমিত। মন্দিরে পুজোর পর মতুয়া পাগল, গোঁসাই, দলপতিদের সঙ্গেও দেখা করার কথা ছিল অমিতের। সে জন্য ঠাকুর মন্দিরের পুরোহিত হরিবর সরকার, গোঁসাই পরিষদের সম্পাদক বিপদভঞ্জন বিশ্বাসরা হাজির ছিলেন দুপুর থেকে। কিন্তু তাঁদের আশা পূরণ হয়নি।
মাঠে লোক কম হওয়া নিয়ে শান্তনু বলেন, ‘গুনে গুনে কত লোক হয়েছে সেটা তো আর বলতে পারব না। তবে মাঠ উপচে পড়েছে।’ কিন্তু বাস্তব বলছে, গত ৩০ জানুয়ারি অমিত শাহের সভা নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটাও ছিল না। বরং শাহ বক্তব্য শুরু করতেই অনেকে মাঠ ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছেন। কোচবিহার থেকে আসা কালীপদ বিশ্বাস বলেন, ‘ভেবেছিলাম নাগরিকত্ব নিয়ে দিনক্ষণের কথা জানতে পারব। কিন্তু উনি যা বললেন তাতে কোনও দিশা পেলাম না।’ বর্ধমানের বোধদীপ্ত বিশ্বাস এবং মহেশ সরকার বলেন, ‘কবে থেকে আমরা নাগরিকত্ব পাব, তার কথা বললে ভালো হত। এখন ফের অপেক্ষাতেই থাকতে হবে আমাদের।’ ডানকুনির গোঁসাই জীবন রায়ও সাফ জানালেন, ‘সভায় এসে আশা পূরণ হল না।’
এদিকে, শাহের সভা নিয়ে তৃণমূল প্রভাবিত অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘অমিত শাহ সভার আগে মন্দিরে পুজো দিতে আসতে পারলেন না। এলেন না বড়মার ঘরেও। মতুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেননি। সভামঞ্চ থেকে জয় শ্রীরামের স্লোগান তুললেন, অথচ ঠাকুরবাড়িতে এসে মতুয়াদের হরিবোল ধ্বনি দিলেন না। এই অপমানের জবাব মতুয়ারা বিধানসভা নির্বাচনেই দেবেন।’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা ঠিক হয়নি। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ভুল বুঝিয়ে মতুয়াদের ভোট পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু একুশের নির্বাচনে সেটা হবে না।’