উত্তরবঙ্গের বহু বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা ভোটের লিড ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে পদ্ম শিবির। সম্প্রতি শিলিগুড়ি ও রায়গঞ্জে তাদের যোগদান শিবির কার্যত ফ্লপ হওয়ায় বিজেপির একাংশ এরকমই আশঙ্কা করছে। এই পরিস্থিতি তাদের কাছে সিঁদুরে মেঘের শামিল। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে অনেকটাই ঘর গুছিয়ে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির।
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের আটটি কেন্দ্রের মধ্যে সাতটিই দখল করেছিল পদ্ম শিবির। প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে তারা ৫৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে লিড পায় ৩৭টিতে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলির মধ্যে শিলিগুড়ি অন্যতম। এখানে গেরুয়া শিবির ৬৫ হাজার ৪৮৬ ভোটে লিড পায়। কয়েকদিন আগে এই শহরেই ‘যোগদান মেলা’ কর্মসূচি করে বিজেপি। তাতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ শীর্ষ নেতারা হাজির ছিলেন। কিন্তু সেই কর্মসূচি কার্যত ফ্লপ হয়।
শিলিগুড়ি মহকুমার মধ্যে আরএকটি বিধানসভা কেন্দ্র মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি। এই কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৯৮ হাজার ৮৯৮ ভোটের লিড পায় বিজেপি। কিন্তু বর্তমানে এখানে সক্রিয় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট। ট্রাক্টর মিছিল, সভা, পদযাত্রা সহ তাদের কর্মসূচি অব্যাহত। স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, এখানে তৃণমূলকে দেখা গেলেও বিজেপিকে দেখা যাচ্ছে না। কাজেই এখানে বিজেপি কিছু করতে পারবে না। লড়াই হবে জোট বনাম তৃণমূলের। তৃণমূলের ঘাঁটি ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রেও লোকসভা ভোটে লিড পায় বিজেপি। সেখানে লিড ছিল প্রায় ৮৬ হাজার ভোটে। গত বিধানসভা ভোটেও এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। বর্তমানে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়ে প্রশাসনিক মিটিং করার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত দলীয়ভাবে মিটিং, মিছিল করছেন। তিনি বলেছেন, এবারও এই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে আসবে। শুধু তাই নয়, গোটা উত্তরবঙ্গেই আমাদের দল ভালো ফল করবে।
শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলি নয়। কোচবিহার থেকে মালদহ সর্বত্রই প্রায় একই অবস্থা। মাটি কামড়ে পড়ে ঘাসফুল শিবির। দুয়ারে সরকার কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয়ভাবে বঙ্গধ্বনি যাত্রা, পাড়া বৈঠক, বাড়ি বাড়ি অভিযান, বুথে বুথে ঝান্ডা লাগানো কর্মসূচির মাধ্যমে অনেকটাই চনমনে তৃণমূল শিবির।
এই প্রেক্ষাপট নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, আগের থেকে অনেকটাই গোছানো ও ঐক্যবদ্ধ ঘাসফুল শিবির। সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা বিধানসভা ভোটের ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন। তিনজন বিধায়ক দলত্যাগ করার পর উত্তরবঙ্গে তৃণমূলে তেমন ভাঙন ধরাতে পারেনি বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রতি মানুষের আবেগ ছিল। বর্তমানে সেই আবেগ অনেকটাই ফিকে। কাজেই এবার গেরুয়া বাহিনীর কাছে লড়াই অনেকটাই কঠিন। তাদের কাছে অনেক আসনে লোকসভা ভোটের লিড ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ হবে। বিজেপির একাংশ এই সংশয় মেনেও নিয়েছেন।