পদ্মশ্রী পেলেন বর্ধমানের শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষায় অবদানের জন্য তাঁকে প্রদান করা হল এই সম্মান। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে যারপরনাই আপ্লুত ‘মাস্টারমশাই’।‘‘প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি ! গ্রামাঞ্চলের এক জন মাস্টারমশাইয়ের কথা ওঁরা ভেবেছেন, আমি কৃতজ্ঞ।’’ জানিয়েছেন সুজিতবাবু। বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগরে দীর্ঘ দিন ধরে ‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ চালান তিনি। প্রায় ৩০০ পড়ুয়া পড়ে সেই পাঠশালায়। পড়ুয়া পিছু ‘গুরুদক্ষিণা’ বছরে ২ টাকা। সঙ্গে চারটি ছোট চকোলেট। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত ৭৮ বছরের ‘মাস্টারমশাই’। ‘‘আমি সামান্য এক জন মাস্টারমশাই। গরিব ঘরের বাচ্চাদের পড়াই। ভীষণ সম্মানিত বোধ করছি। আমি খুব খুশি।’’ সোমবার রাতে এমনই বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ দিল্লীর একটি নম্বর থেকে সুজিতের ভাইপো উৎসব চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে ফোন আসে। উৎসব বলেন, ‘‘ফোন করে জেঠুকে চাওয়া হয়। আমি জেঠুকে দিই ফোনটা।’’ পরেরটুকু যোগ করলেন সুজিতবাবু স্বয়ং। বললেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি সুজিত চট্টোপাধ্যায় ? এ বারের পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় আপনি রয়েছেন। আজ তালিকা প্রকাশিত হবে। অনুষ্ঠান দিল্লীতে আগামী মার্চের শেষের দিকে। প্রথমে তো বিশ্বাসই হয়নি। মেয়েকে বললাম। ও বলল, কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। তার পর আপনাদের ফোন। ভীষণ খুশি হয়েছি।’’
বর্ধমানের রামনগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক সুজিতবাবু। প্রায় ৪০ বছর স্কুলে পড়ানোর পর অবসর নেন। গত ১৮ বছর ধরে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের গরিব-দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের প্রাইভেট টিউশন দেন। নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পাশাপাশি প্রথম থেকে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের পড়ান। তাঁর পাঠশালার ৮০ শতাংশই ছাত্রী। পড়ুয়াদের যাদের মোবাইল আছে, লকডাউনের সময়ে তাদের পড়িয়েছেন মাস্টারমশাই। লকডাউনে কর্মহীন আড়াইশো পরিবারের হাতে চার দফায় তুলে দিয়েছেন ৭৫ হাজার টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। গ্রামের ৭ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পাশেও আছেন সুজিত। বছরে এক বার তাদের হাতে তুলে দেন ৫ হাজার করে টাকা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কর্মকাণ্ডের সবটাই চলে তাঁরই দাক্ষিণ্যে।
যৌথ পরিবার সুজিতবাবুর। সংসারে স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা রয়েছেন। সুজিতের একমাত্র ছেলে কালনায় এসডিও অফিসে কাজ করেন। সুজিতের মেয়ের বিয়ে হয়েছিল ধানবাদে। জামাই মারা গিয়েছেন। নাতি-নাতনিদের পড়াশোনাও সুজিতের দায়িত্বে। তাঁর স্ত্রী শয্যাশায়ী। তাঁরও চিকিৎসা চলছে। পদ্মশ্রী পাওয়ার খবরে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পাশাপাশি খুশি গোটা এলাকা। ‘‘খবর পাওয়ার পর গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে আমাদের বাড়িতে। আমরা সকলে জেঠুর এই সম্মানে গর্বিত।’’ জানিয়েছেন ভাইপো উৎসব।