সুনিপুণ দক্ষতায় একের পর এক জামদানি শাড়ি তাঁর হাতে অনন্য সুন্দর রূপ ধারণ করেছে। জামদানি শাড়ির উপর একের পর এক নকশা, শৈল্পিক কারুকাজ তিনি ফুটিয়েছেন অনবরত। এই অসামান্য দক্ষতার স্বীকৃতি তিনি আগেও পেয়েছেন। আর এবার ঝুলিতে এল পদ্মশ্রী সম্মান। ২০২১ সালে পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিয়ার রয়েছে তাঁরও নাম। তিনি নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বীরেন কুমার বসাক।
ফুলিয়ার বসাক পাড়ার বাসিন্দা বীরেন কুমার বসাক। সোমবার রাতেই তাঁর কাছে এই সুখবর আসে। প্রথমে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! তারপর থেকেই ভাসছেন শুভেচ্ছার বন্যায়। এর আগে তিনি রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও। নাম উঠেছে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড-এও। একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। অবশেষে এবার পদ্মশ্রী। স্বাভাবিকভাবেই ভীষণ খুশি বীরেনবাবু। ৭০ বছর বয়সী প্রবীণ তাঁতশিল্পী ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারত সরকারকে।
তাঁর হাত ধরেই বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে ফুলিয়ার তাঁতশিল্পীরা ও তাঁদের কাজ। এবার ফুলিয়ার তাঁতের বিশ্বায়নে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি পেলেন বীরেন কুমার বসাক। পদ্মশ্রী প্রাপক তাঁতশিল্পী জানালেন, ১৫ বছর বয়স থেকেই তাঁত বোনার কাজে হাতেখড়ি হয় তাঁর। প্রায় ১০ বছর নিজে তাঁত বোনেন। তারপর দীর্ঘ সময় নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে শাড়ি বিক্রি করেছেন।
এরপর বিগত ৪৮ বছর ধরে জামদানি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। খাদি, মটকা, তসর, সিল্ক, মসলিন সহ একাধিক কাপড়ের উপর বিভিন্ন রকম নকশা ফুটিয়ে তুলে সকলের নজর কেড়েছেন। প্রবীণ শিল্পীর কথায়, ১২,৭৮০ খানা সুতো দিয়ে তৈরি শাড়িতে কীভাবে কত সুন্দর করে নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়, তা নিয়েই দিনরাত নিরন্তর ভাবনাচিন্তা, পরিশ্রম করে চলেছেন কারিগররা। ৭০০ থেকে ৮০০ রকম রং ব্যবহার করা হয় শাড়ি তৈরিতে।
এদিন ৭০ বছর বয়সী শিল্পী বীরেন বসাক জানালেন, বর্তমানে ফুলিয়ার ২ হাজার মহিলা তাঁতশিল্পী এবং ৩ হাজার পুরুষ তাঁতশিল্পী শাড়ি বুনেই তাঁদের রুটি-রুজির সন্ধান করে নিয়েছেন। সরকার পাশে থাকলে এই শিল্পকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবেন তাঁতশিল্পীরা।