কোহলির মতো আগ্রাসন বা ঠাটবাট তাঁর নেই। প্রচারের শিরোনামে থাকার গরজও দেখান না। বরং আড়ালে থেকে চুপচাপ নিজের দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার তত্ত্বে বিশ্বাসী তিনি। তাই ভারতীয় ক্রিকেটে খানিকটা রাহুল দ্রাবিড়ের মতো নেপথ্য নায়ক হয়েই থেকে গিয়েছেন অজিঙ্কা রাহানে। তবে তিনি যতটা চুপচাপ, ততটাই উদ্ভাসিত তাঁর রেকর্ড। স্রেফ ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ উজ্জ্বল তাঁর রেকর্ড। স্ট্যান্ড-ইন ক্যাপ্টেন হিসেবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন সফরেও ধরে রেখেছেন তিনি। অধিনায়ক রাহানে টেস্ট ক্রিকেটে এখনও অপরাজিত। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভাঙাচোরা দল নিয়েই ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে বাজিমাত করেছেন ‘জিঙ্কস’। বিরাট কোহলির পর ভারতের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে স্বাদ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ জয়ের।
ওয়ান ডে ক্রিকেটেও অপরাজিত রয়েছেন অধিনায়ক রাহানে। তিনটি ম্যাচের সবক’টিতেই জিতেছেন তিনি। শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু’টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে একবার হারের মুখ দেখতে হয়েছে তাঁকে। রাহানের ক্যাপ্টেন্স লাক নিয়ে চলছে জোর চর্চা। তবে শুধুমাত্র ভাগ্যের দোহাই দিয়ে তাঁর কৃতিত্বকে ছোট করা যাবে না। বোলিং চেঞ্জ থেকে শুরু করে ফিল্ডিং সাজানো, কিংবা সহ-খেলোয়াড়দের উদ্দীপ্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার প্রশংসা করতেই হবে। মৃদুভাষী রাহানের শরীরী ভাষা কোহলির মতো আগ্রাসী না হলেও তাঁর অধিনায়কত্ব যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। মাঠে লম্ফঝম্প কম করেও যে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা যায়, তার সফল দৃষ্টান্ত রেখেছেন ৩২ বছর বয়সি এই মুম্বইকর। অধিনায়কের এই শান্ত, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব দলের মধ্যেও ফুটে উঠেছে। মাত্র পাঁচটি টেস্টে অধিনায়কত্ব করা রাহানের সঙ্গে হয়তো কোহলির নেতৃত্বের তুলনা চলে না। তবু স্বল্প সুযোগেই তাঁর উজ্জ্বল রেকর্ড কখনও ধামাচাপা পড়ার নয়।
এখনও পর্যন্ত পাঁচটি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাহানে। জিতেছেন চারটিতেই। ড্র হয়েছে একটি টেস্ট। ২০১৭ সালে ধরমশালায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে দাপুটে জয় পেয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। এরপর ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। প্রত্যাশিত ভাবে সেই ম্যাচেও জেতে ভারত। আর এবার সাফল্যের ধ্বজা ওড়ালেন খোদ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। প্রথম টেস্টে ৩৬ রানে অল-আউট হওয়ার কলঙ্ক গায়ে মেখে ব্যক্তিগত কারণে দেশে ফেরেন বিরাট কোহলি। দলের হাল ধরেন রাহানে। মেলবোর্ন টেস্টে তাঁর শতরানে ভর করে সিরিজে সমতা ফেরায় ভারত। সিডনিতে দ্বিতীয় টেস্টে হারের মুখ থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ ড্র করে রাহানে-ব্রিগেড। আর অ্যাডিলেডে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব ও তরুণ ক্রিকেটারদের অনবদ্য লড়াইয়ের সৌজন্যে নিশ্চিত হয়েছে স্মরণীয় সিরিজ জয়।