সম্প্রতি কিছুটা কমেছে আনাজের দাম। কিন্তু তাতেই স্বস্তি ফিরছে না আমজনতার মনে। বরং তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরো চওড়া করে ডিজেলের সঙ্গে তাল মিলিয়েই রেকর্ড উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলল পেট্রোলের দর। আজ কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটার-পিছু পেট্রোল ২৩ পয়সা বেড়ে এই প্রথম পৌঁছে গিয়েছে ৮৬.১৫ টাকায়। যদিও ২০১৮ সালের পরে এই জ্বালানি নতুন নজির গড়েছিল গতকালই। ছুঁয়ে ফেলেছিল ৮৫.৯২ টাকা। ২৫ পয়সা বেড়ে আজ শহরে এই প্রথম ৭৮.৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিজেলও। এটিও রেকর্ড দর।
স্বাভাবিকভাবেই তেলের এমন বেনজির দরবৃদ্ধিতে হতবাক ও উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠছে, করোনার আবহে দাঁড়িয়েও জ্বালানির দাম কমাতে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের দাবিতে কান দিচ্ছে না কেন কেন্দ্র ? সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। তেলের দাম যাতায়াতের খরচও বাড়াবে। পরিবহনের খরচ বাড়ায় খাদ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র দামও চড়বে। যা আরও ঠেলে তুলবে মূল্যবৃদ্ধির হারকে। সে ক্ষেত্রে এখনই শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ করে দামে রাশ না-টানলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে যাবে না কি ? আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের।
তেলের এমনই চড়া দাম নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পেয়ে গত মঙ্গলবারই তেল মন্ত্রক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে নিয়ে তড়িঘড়ি বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র। কিন্তু হাজার বার দাবি ওঠার পরেও শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত সেখানে হয়নি। সূত্রের দাবি, পেট্রোল-ডিজেলের দাম আরও বাড়তে পারে, তেল সংস্থাগুলির তরফে এই বার্তা পেয়ে শুল্ক ছাঁটাইয়ের ভাবনাকে একেবারে বাদ দিতে পারছে না কেন্দ্র। কিন্তু এখনও এ নিয়ে কোনও সাড়া-শব্দ না-মেলায় বিস্ময় বাড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। বিজেপি শাসিত সরকারের তীব্র সমালোচনায় মুখর বিরোধী দলগুলি।
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি অবশ্য বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়তে থাকা দরকেই পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তা হলে লকডাউনের সময় অশোধিত তেল যখন শূন্যের নীচে তলিয়ে গেল, তখন দেশে সেই হারে পেট্রোল-ডিজেলের দর কমল না কেন ? উল্টে সে সময় উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরেছিল কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, তখন দাম কমালে এখন তা হয়তো এভাবে ফুলেফেঁপে উঠত না। তারা এও দাবি করেছে, ২০১৪ সালের মে মাসে পেট্রোল ও ডিজেলে লিটার পিছু উৎপাদন শুল্ক যেখানে যথাক্রমে ৯.২০ টাকা ও ৩.৪৬ টাকা ছিল, সেখানে গত সাড়ে ছ’বছরে এর উপরে পেট্রোলে ২৩.৭৮ টাকা ও ডিজেলে ২৮.৩৭ টাকা শুল্ক বাড়িয়েছে মোদী সরকার। যথাক্রমে ২৫৮% এবং ৮২০%।