একেই করোনার দাপট। এবার তার দোসর বার্ড ফ্লু।
দেশজুড়ে ফের শুরু হয়েছে আশঙ্কা। সম্প্রতি নবান্ন সতর্কতা জারি করে নোটিশও দিয়েছে। এবার শুধু আতঙ্কের কারণেই ভাটা পড়ল মুরগীর মাংসের দাম। যে মাংস দিন চারেক আগেও ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বাজারভেদে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিকোচ্ছে। শুধু দামই কমেনি। কমেছে বিক্রিও। বার্ড ফ্লু’র আতঙ্ক ছড়াতেই অনেকেই চিকেনের থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। মাংসের দোকানের লাইন ছোট হতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস চড়ুইভাতির মরশুম। বেশিরভাগ জায়গাতেই মুরগীর মাংসই থাকে মেনুতে। নয়া আতঙ্কে তাই অনেকেই মেনু বদলাচ্ছেন। আবার দামে সস্তা হওয়ায় অনেকের মুখেই ফুটেছে চওড়া হাসি। ভয় উপেক্ষা করে কম দামেই মাংস কিনতে রাজি তাঁরা।
দিল্লী থেকে হরিয়ানা, বার্ড ফ্লু’র প্রকোপে সর্বত্রই প্রভাব পড়েছে পোলট্রি ব্যবসায়। বাংলাতেও কমতে শুরু করেছে মুরগীর মাংসের দাম। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি সপ্তাহে রাজ্যে মুরগীর মাংসের চাহিদা ২ কোটি ৪০ লক্ষ কেজি। এর মধ্যে আমাদের রাজ্যে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ কেজি। বাকিটা অন্য রাজ্য থেকে আসে। সপ্তাহান্তে সেই চাহিদাও আরও কমবে, মিলেছে ইঙ্গিত। ইতিমধ্যে চাহিদা কমেছে কুড়ি শতাংশ। করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে রাজ্যের বহু মানুষ মুরগীর মাংস এড়িয়ে চলায় ২০২০-তে প্রায় ৩০০ কোটির ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল পোলট্রি শিল্পকে। ফের একবার বার্ড ফ্লু আতঙ্কে আবারও দেখা দিয়েছে ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কা। ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি এপ্রসঙ্গে জানান, “প্রতি বছরই এই শীতের সময়টায় বার্ড ফ্লু’র আতঙ্ক ফিরে আসে। আর তাতে মারাত্মক ক্ষতি হয় এ রাজ্যের পোলট্রি শিল্প ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষের। এ রাজ্যে এখনও কোনও মুরগীর মধ্যেই বার্ড ফ্লু’র কোনও লক্ষণ ধরা পড়েনি। অথচ অযথা আতঙ্কে মাংসের দাম এবং বিক্রি কমতে শুরু করেছে। এ রাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ পোলট্রি শিল্প বা উৎপাদন খামারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তারা পড়বেন সমস্যায়।”
উল্লেখ্য, বার্ড ফ্লু’র আতঙ্কের দরুণ ডিমের দাম পাইকারি বাজারে ১ টাকা ৩০ পয়সা কমলেও খোলা বাজারে তার প্রভাব নেই। এখনও তা বিকোচ্ছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টাকায়। পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্লু’র আতঙ্কের সুযোগেই ফড়েরাজ চলছে ডিম ব্যবসায়। না হলে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খোলা বাজারের এত ফারাক হয় না দামের। এ রাজ্যে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম ৫ টাকা ৭০ থেকে কমে হয়েছে ৪ টাকা ৪০ পয়সা। চাহিদাও কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে রাজ্যে ডিমের দৈনিক চাহিদা ২ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ১ কোটি দেশি মুরগীর ডিম। আরও ১ কোটি রাজ্যের পোল্ট্রিতে উৎপাদন হয়। বাকি ৮০ লাখ আসে অন্য রাজ্য থেকে। গত চারদিনেই সেই চাহিদা কমলেও দাম কমছে না খোলাবাজারে। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের কপালে।