এবার ঋষভ পন্থের ক্যাচ মিস প্রসঙ্গে মুখ খুললেন প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানি।
সিডনি টেস্টে দুটি সহজ ক্যাচ ফেলেন পন্থ। এবিষয়ে কিরমানি জানান, ঋষভের ব্যাটিং নিয়ে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু পন্থের কিপিং দেখে হতাশ ভারতের বিশ্বকাপজয়ী উইকেটরক্ষক। এখনও সাবলীল ভাবে পায়ের নড়াচড়া করতে পারেন না পন্থ, যা তিনি অনায়াসে শিখে নিতে পারেন তাঁর সিনিয়র সতীর্থ ঋদ্ধিমান সাহার কাছ থেকে, এমনটাই মত কিরমানির।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার আগে কিরমানি চার বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। ব্যাকরণ মেনে কিপিং করা রপ্ত করেছিলেন তিনি। ঋষভের হাত থেকে একাধিক ক্যাচ পড়তে দেখে কিরমানি জানিয়ে দিলেন, ফিটনেস ও পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের অভাব ফুটে উঠেছে ঋষভের পারফরম্যান্সে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৪টি টেস্টে ১৩টি ক্যাচ পড়েছে ঋষভের হাত থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে যা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। শুক্রবার ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষে সংবাদমাধ্যমকে কিরমানি বলেন, “ব্যাটসম্যানকে যেমন বিচার করা হয় তার ফুটওয়ার্ক দেখে, ঠিক তেমনই কিপারের ক্ষেত্রেও ফুটওয়ার্ক অত্যন্ত জরুরি। ঋদ্ধিমান সাহাকে দেখলে বোঝা যায়, লেগসাইডে বল ধরতে কোনও সমস্যাই হয় না ওর। কারণ ক’টি ধাপে বলের কাছে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব তা রপ্ত করে ফেলেছে ও। ঋষভ কিন্তু লেগসাইডের বল শরীর না ছুড়ে ধরতে পারে না। এখানেই ছবিটি পরিষ্কার, সঠিক প্রস্তুতির অভাব।”
পাশাপাশি স্পিনারের ক্ষেত্রে ঋষভের কিপিং সমস্যা নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। “স্পিনার বল করার সময় বাউন্সের সঙ্গে কোমর ওঠাতে হয় কিপারকে। সহজে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি স্টাম্প পুঁতে স্পিনারের বিরুদ্ধে কিপিং করে যেতে হয়। তবেই বাউন্সের তালে শরীরের নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে দেখেছি, ঋদ্ধি এ ভাবেই অনুশীলন করত। পন্থেরও উচিত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এ ধরনের অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া।” জানিয়েছেন কিরমানি। তাঁর কথায়, “কোমর দ্রুত উঠে গেলেও হাত যতটা সম্ভব নীচে থাকা উচিত কিপারের। ঋষভের হাত কিন্তু আগেই উঠে যাচ্ছে। তাই অশ্বিনের বলে পুকভস্কির ক্যাচ গিয়ে পড়ে ওর বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে।” পুকভস্কির ক্যাচ মিস প্রসঙ্গে তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুলে বল লাগা মানে ব্যাট ছোঁয়ার পরে সেই মাত্রায় নড়েনি বল। হাতের পজিশন ঠিক জায়গায় না থাকার কারণেই সেই ক্যাচ ফস্কায় পন্থ। হাতের পজিশন ঠিক রাখার জন্য দেওয়ালে বল ছুড়ে অনুশীলন করা উচিত পন্থের। লকডাউনে যেটা করত ঋদ্ধি। তাতে হাতের পজিশনও নিচু থাকে। হাতের তালু নরম রাখার কৌশলও শেখা যায়।”
কিরমানি চান, এখনও দু’বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে তৈরি হোন ঋষভ। তাহলে আরো পোক্ত হতে পারবেন তিনি। প্রসঙ্গত, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অভিষেকের পর থেকে উইকেটকিপারের চাহিদা কমেছে। বেড়েছে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের গুরুত্ব। কিন্তু চেষ্টা করলেও যে ধোনি হওয়া সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তিনি। কিরমানি জানান, “ধোনির প্রতি যোগ্য সম্মান দিয়েই বলছি, ব্যাকরণ মেনে কিন্তু কিপিং করত না ধোনি। ওর নিজস্ব ভঙ্গি ছিল। তাকে দেখে যদি কেউ কিপিং শিখতে যায়, তা হলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।” কিরমানির আরও বলেন, “ঋষভকে বুঝতে হবে, ধোনির জায়গা পূরণ করার জন্য ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিপিংটাও জরুরি। উইকেটের পিছন দিয়ে অনর্গল কথা বলে গেলে তো উইকেট আসবে না। ম্যাচে মনোনিবেশ করতে হবে। একজন কিপার দলের স্তম্ভ। সে এ ভাবে ক্যাচ ফেলতে থাকলে দলের আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে যেতে বাধ্য।”