মোদী ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্লোগান তোলার পর থেকে বিভিন্ন পণ্যের ওপরে আমদানি শুল্ক বেড়েই চলেছে ক্রমশ। কারণ শুল্ক বাড়ানোর নীতি নিয়েই আমদানি করা পণ্যের ওপরে নির্ভরতা কমাতে চাইছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমদানি শুল্ক কমানোর পক্ষেই সওয়াল করলেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের পরামর্শ, আমদানি শুল্ক বাড়ানো নয়, বরং কমানো হোক।
প্রসঙ্গত, বাজেট-প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করার রাস্তা খুঁজতে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মোদী। সূত্রের খবর, ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ উঠে এসেছে। বৈঠকে ছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণও। তাঁর মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এর আগে স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্টেও সুপারিশ করা হয়েছিল যে, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়তে আমদানি শুল্ক না বাড়িয়ে বরং দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া হোক। যুক্তি ছিল, আমদানি শুল্ক বাড়লে, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে খরচ বাড়ছে শিল্পে উৎপাদনের।
গত বাজেটে চীনের সস্তা পণ্য আটকাতে খেলনা থেকে আসবাব, জুতো-চপ্পল থেকে বৈদ্যুতিন পণ্য পর্যন্ত বিভিন্ন সামগ্রীতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। শুল্ক আইন সংশোধন করে যে কোনও পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির রাস্তাও তৈরি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তখনই অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, ১৯৯১ সালের আর্থিক উদারিকরণ নীতির উল্টো পথে হাঁটছে কেন্দ্র। কারণ, বাজার নির্ভর অর্থনীতির পথে হাঁটতে শুরু করার পরে সোনা-রুপো ছাড়া সে ভাবে আর কিছুর আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি ভারত।
গতকালের বৈঠকেও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সঙ্গে লেনদেনে বাধা কাটানো সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্ণধার কে ভি কামাথ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা রাকেশ মোহন, প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা শঙ্কর আচার্য, নীতি আয়োগের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগাড়িয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ অভীক বডুয়া, স্টেট ব্যাঙ্কের সৌম্যকান্তি ঘোষ, নোমুরা-র সোনাল বর্মা প্রমুখ। ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান বিবেক দেবরায়ও।
অর্থনীতিবিদরা খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারের দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যা এখন ৭ শতাংশের আশেপাশে। বিলগ্নীকরণে জোর দিতে বলেছেন। আয়কর তথা প্রত্যক্ষ কর এবং জিএসটির বোঝা কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি লাগামছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা। অর্থনীতিবিদদের সুপারিশ, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও সরকারি লগ্নী প্রয়োজন হলেও, ঘাটতিতে লাগাম পড়ানোর নতুন রূপরেখা তৈরি রাখুক কেন্দ্র। এদিকে বৈঠকে মোদী দাবি করেছেন, কোভিডের ধাক্কা সামলেও সংস্কার ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্পের পথে হেঁটেছে সরকার।