অন্য দল থেকে নেতারা বিজেপিতে এসেই কার্যকর্তা হয়ে যাচ্ছে, এই অভিযোগ নতুন নয়। লোকসভা ভোটের পর থেকেই গেরুয়া শিবিরের অন্দরে এই আদি-নব্য দ্বন্দ্ব চলছে। তবে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসতেই দেখা যাচ্ছে, কখনও ভিনদল থেকে আসা নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীদের হাতাহাতি বেধে যাচ্ছে, কখনও আবার চা-চক্রে যোগ দিতে এসে দলীয় কর্মীদের সমালোচনা এবং হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে দলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতিকে। এবার সেসব কিছুকেই ছাপিয়ে গেল শুক্রবার নন্দীগ্রামে বিজেপির সভা। ১ লক্ষ অনুগামী ও সমর্থককে নিয়ে নন্দীগ্রামে সভা করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু সেই সভার মূল উদ্যোক্তা হয়েও তিনিই কিনা শেষ পর্যন্ত বক্তব্য রাখতে পারলেন না। আদি বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের জেরে মাঝপথেই শেষ করতে হল সভা।
শুক্রবার দলীয় সভা ঘিরে মেদিনীপুরের বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অলিখিত ঠিকানা হয়ে গিয়েছিল নন্দীগ্রামের স্টেট ব্যাঙ্ক সংলগ্ন মাঠ। কিন্তু সভার তাল কাটে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের বক্তব্য চলাকালীন বিশৃঙ্খলাকে ঘিরে। সে সময় হঠাৎ প্যান্ডেলের একটি অংশে লাইট নিভে যায়। এবং বেশ কিছু মানুষ সেখানে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। ইট-পাটকেল পড়ার সঙ্গে ওঠে চোর চোর স্লোগানও। কী হয়েছে প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না মঞ্চে উপবিষ্ট বিজেপি নেতৃত্ব। বক্তব্য থামিয়ে দেন কৈলাসও। তড়িঘড়ি মাইক হাতে নিয়ে সভার রাশ নিজের হাতে নেন শুভেন্দু অধিকারী। আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন আগত শ্রোতাদের। তাঁদের কৈলাসের বক্তব্য শোনার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে চিড়ে না ভেজায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপির জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক উচ্চৈস্বরে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। যাতে গলা মেলান মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্যরাও।
এই ঘটনার পরই স্পষ্ট হয়ে যায় শুভেন্দু এবং ‘দাদার অনুগামী’দের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন জেলায় বিজেপির পুরনো কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের নিশানায় ছিলেন বিজয়বর্গীর মতো বাইরে থেকে আসা নেতাও। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই মেদিনীপুর জেলা জুড়ে যোগদান মেলা করছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে গোটা চিত্র বদলে দেবেন জেলার। কিন্তু শুভেন্দুর সেই হুঙ্কার গতকাল ফাঁকা আওয়াজেই বদলে যায়। মেগা যোগদান মেলাও হৈ-হট্টগোলের চোটে আদি নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ স্থলে পরিণত হয়ে যায়। গেরোয় পড়ে শুভেন্দু মেগা শোয়ে ঝামেলার জন্য তৃণমূলকে নিশানা করলেও তাঁর পুরনো দলের যুক্তি অবশ্য আলাদা। তৃণমূল ভাঙিয়ে ‘মেগা যোগদান মেলা’মেনে নিতে পারছেন না বিজেপির নীচুস্তরের কর্মীরা। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ আজ নন্দীগ্রামের সভায় দেখেছেন গেরুয়া নেতারা।