সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও বিপত্তিকে দূরে ঠেলে অবশেষে আজ থেকে শুরু হতে চলেছে ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। তবে এবার নেতাজী ইন্ডোরে নয়, এই প্রথম এই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হচ্ছে ভার্চুয়াল ভাবে। করোনা অতিমারী আবহের কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। এবার ৪৫টি দেশের ৮১টি সিনেমা দেখানো হবে এই উৎসবে। উৎসব চলবে ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত।
এবছর ফেস্টিভ্যাল নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলই। করোনা প্রকোপের বশবর্তী হয়ে নভেম্বরে আয়োজন করা যায়নি উৎসবের। অতিমারী পরিস্থিতিতে কতটা উচিত হবে উৎসবের আয়োজন করা, তা নিয়েও সংশয় ছিল। গত এক দশকে এই চলচ্চিত্র উৎসবকে নন্দন চত্বরের সীমাবদ্ধতা থেকে বার করে এনে তা মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশবিদেশের তাবড় তাবড় তারকা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, চিত্রপরিচালকেরা এসেছেন উৎসবের সূচনার আসরে। রীতিমতো চাঁদের হাট বসেছে এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে। এবারে এসব থাকছে না। তবে আশায় চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার কলকাতায় ফিরবে সেই চাঁদের হাট।
প্রসঙ্গত, বিকাল ৪টের সময় নবান্ন থেকে ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভার্চুয়াল ভাবেই সেই অনুষ্ঠানে মুম্বই থেকে যোগ দেবেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খান। থাকবেন টলিউডের তারকা, বাংলার মন্ত্রী এবং বিশিষ্টজনেরাও। আমজনতা যাতে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি উপভোগ করতে পারেন তার জন্য শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয়েছে ৫০টি বিশাল আকারের এলইডি স্ক্রিন। ভার্চুয়াল উদ্বোধনের পরেই এদিন বিকেল ৫টায় রবীন্দ্র সদনে দেখানো হবে উদ্বোধনী ছবি ‘অপুর সংসার’। নন্দন ছাড়াও উৎসবের সিনেমা দেখা যাবে রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন ও রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে। এবারে কোনও বেসরকারি প্রেক্ষাগৃহে কোনও সিনেমা দেখানো হচ্ছে না। করোনা আবহে এবারে সিনেমা দেখানোর পরিসর অনেকটাই কমিয়ে এনেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, এই স্বল্প পরিসরেও বাঙালি ও বাংলা চলচ্চিত্রকে অনেকটাই জায়গা দেওয়া হয়েছে। বাংলা প্যানারোমা বিভাগে এবারে থাকছে – সহবাসে, মানব মানবী, মিছিল, বিষ, দায়, শূন্য, তিতলি ও বিউটিফুল লাইফ। শতবর্ষে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর জন্য দেখানো হবে তাঁর অভিনীত ছবি ভ্রান্তিবিলাস। দেখা যাবে ‘ভুবনময় ভানু’ নামের একটি তথ্যচিত্রও। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেখানো হবে সপ্তপদী। অনুরাধা সিনেমাটি দেখানো হবে পণ্ডিত রবিশংকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। বিশেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে কল্পনা সিনামটি দেখানো হবে অমলা শংকরের জন্য। বাসু চট্টোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে দেখানো হবে ছোটি সি বাত।
সদ্যপ্রয়াত ইরফান খানকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখানো হবে তাঁর অভিনীত পান সিং তোমর ছবিটি। মুল্ক সিনেমাটি দেখানো হবে ঋষি কাপুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে। হেমন্তের পাখি দেখানো হবে সন্তু মুখোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা জানিয়ে। আর থাকছে কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে কিছু সিনেমা। তার মধ্যে থাকছে পদক্ষেপ, বহমান, গণদেবতা, কোনি’র মতো ছবি। থাকছে দেখা, হুইল চেয়ার, আকাশ কুসুম, ময়ূরাক্ষীর মতো সিনেমাও। থাকছে তাপস পালের স্মরণে দাদার কীর্তি ও ৮.০৮-এর বনগাঁ লোকাল – এই সিনেমা দুটিও। এছাড়াও অভিযাত্রিক ও মহানগর – এই সিনেমা দুটি প্রদর্শিত হবে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে।