অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। ভারতে কবে করোনার টিকাকরণ শুরু হবে, সে প্রশ্নে মোটামুটি ইতি পড়ল। আজ দেশজুড়ে শুরু হয়েছে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় দফার ড্রাই রান। বৃহস্পতিবার রাতে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে নয়াদিল্লী পৌঁছোয় কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ইঙ্গিত অনুযায়ী, ১৩ জানুয়ারি হয়তো শুরু হতে চলেছে টিকাকরণ। তার আগে দেশব্যাপী দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত মহড়া। ২রা জানুয়ারি দেশের ৩৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকায় টিকার মহড়া তথা ড্রাই-রান হয়েছিল। আজ থেকে তিনটি ধাপে দ্বিতীয় পর্বের মহড়া চলবে। বাংলার ৬৯টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে চলবে টিকার মহড়া।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ক্লিনিকেও মহড়া হবে। তাছাড়া জেলাপিছু তিনটি করে জায়গাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। জেলার মেডিক্যাল কলেজ বা জেলা হাসপাতাল, আর্বান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও গ্রামীণ হাসপাতালে ড্রাই রান হবে। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দেশের ৭৩৬টি জেলায় টিকার মহড়া হবে। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও অরুণাচলপ্রদেশে দুই পর্বের মহড়া হয়ে গেছে, কাজেই সেখানে আর ড্রাই-রান হবে না। আজও টিকার মহড়া সরেজমিনে দেখবেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষবর্ধন। দিল্লির বেশিরভাগ জেলাতেই চলবে মহড়া। মহারাষ্ট্রের ৩০টি জেলা ও ২৫টি মিউলিসিপ্যাল এলাকায় টিকাপ্রয়োগের মহড়া চলবে।
কীরকম এই ড্রাই-রান পদ্ধতি ? প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে ‘ডামি’ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সমস্ত জেলায় ভ্যাকসিনের পরিকাঠামো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য জরুরি দিকগুলি ভাল করে খতিয়ে দেখতেই ড্রাই রানের সিদ্ধান্ত। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও অরুণাচলপ্রদেশ অবশ্য আজকের ড্রাই রানে অংশ নিচ্ছে না। কেননা ওই তিন রাজ্যের সমস্ত জেলায় আগেই মহড়া হয়ে গিয়েছে। গত ২৮ ও ২৯শে ডিসেম্বর দেশের চার রাজ্যের মাত্র ৮ জেলায় প্রথম ড্রাই রান হয়েছিল। পরে ২রা জানুয়ারি দেশব্যাপী ৭৪টি জেলায় ড্রাই রান হয়েছ। শুক্রবারের ড্রাই রানই টিকাকরণ শুরুর আগে চূড়ান্ত মহড়া। টিকাকরণের মহড়ায় কো-উইন অ্যাপের ভ্যাকসিন মডিউল ও রেজিস্ট্রেশন মডিউলের আপডেট করা হবে। টিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করা থেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে কোড-যুক্ত সার্টিফিকেট নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ঠিকঠাক পাঠানো যাচ্ছে কিনা, সেসবও খতিয়ে দেখবে স্বাস্থ্যদপ্তর।
প্রসঙ্গত, টিকার অগ্রাধিকার যাঁরা পাবেন তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে হলে আইডি প্রুফ আগে দিতে হবে। নিজের পাসপোর্ট সাইজের ফটো, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট জব কার্ড, প্যান কার্ড, পাসবুক (ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিস), পাসপোর্ট, পেনশন ডকুমেন্ট, যেখানে চাকরি করেন সেখানেকার আইডি কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। টিকা নেওয়ার আগে তাদের মোবাইলে এসএমএস আসবে। সেখানে টিকা নেওয়ার দিন ও স্থান উল্লেখ করা থাকবে। টিকার রেজিস্ট্রেশনের কাজ হবে কো-উইন অ্যাপে। ১২ টি ভাষায় কাজ করবে ওই অ্যাপ। সেই সঙ্গে টিকাকরণের জন্য কাজে লাগবে আধার কার্ড। যিনি টিকা নেবেন তাঁকে আধার কার্ড আনতে বলা হবে। অনিয়ম এড়ানোর জন্য ওই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও আগামী দিনে বিশেষ হেলথ আইডেনটিটি কার্ড করারও পরিকল্পনা রয়েছে। যাঁরা টিকা নেবেন, তাঁদের ওপরে নজর রাখা হবে। এর ফলে কারও দেহে যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, তাহলে জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে। যাঁদের টিকা দেওয়া হবে, তাঁদের কাছে এসএমএস যাবে। মোট ১২ টি ভাষায় এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেককে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ দেওয়ার পরে একটি কিউ আর কোড নির্ভর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। সেই সার্টিফিকেট মোবাইলে রাখা যাবে। এছাড়া যাঁরা ভ্যাকসিন নেবেন, তাঁদের সম্পর্কে ডিজি লকার নামে এক ডকুমেন্ট স্টোরেজ অ্যাপে। সেই সঙ্গে থাকবে হেল্পলাইন। তা সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে।
সবমিলিয়ে, আগামী সপ্তাহ থেকেই দেশে টিকাকরণের পরিকাঠামো প্রস্তুত বলে আগেই জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়ে দেন, চূড়ান্ত অনুমতি পেয়ে যাওয়ার দশ দিনের মধ্যেই টিকাকরণ শুরু করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রবিবারই সেই অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে মনে করা হচ্ছে, ১৩ জানুয়ারিই হয়তো দেশজুড়ে শুরু হয়ে যাবে কোভিডের টিকাকরণ। প্রহর গুনছে দেশবাসী।