মন্দার ছায়া আগেই ছিল। তার সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার সামিল করোনা অতিমারি এবং কিছু মাস আগে অবধি থাকা দীর্ঘদিনের লকডাউন। আর এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপেই চল্লিশ বছর পরে বৃদ্ধির বদলে সঙ্কোচনের মুখ দেখতে চলেছে দেশের অর্থনীতি। বৃহস্পতিবার মোদী সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের পূর্বাভাস, ২০২০-২১ সালে জিডিপি (দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) আগের বছরের তুলনায় সরাসরি কমে যেতে পারে ৭.৭ শতাংশ। শেষমেশ তা মিলে গেলে, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম শূন্যের এতখানি নীচে নেমে যাবে বৃদ্ধির হার। আশঙ্কা লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজকোষ ঘাটতিরও।
সরকারি সূত্র ও অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, এই পূর্বাভাস প্রত্যাশিত। কারণ, অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে (এপ্রিল-জুনে) জিডিপি প্রায় ২৪ শতাংশ সঙ্কুচিত হওয়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল যে, অর্থবর্ষ শেষে বৃদ্ধির হার থাকবে শূন্যের অনেক নীচে। তবে অর্থনীতি দ্রুত ছন্দে ফিরছে বলে দাবি করার পরেও এবার এতখানি সঙ্কোচনের সম্ভাবনা মেনে নিতে বাধ্য হল কেন্দ্র। এর আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ছিল, কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কায় বৃদ্ধির হার নেমে যাবে শূন্যের ৭.৫ শতাংশ নীচে। কিন্তু এখন তার থেকেও বেশি সঙ্কোচনের আশঙ্কা করছে কেন্দ্র। তা-ও এটি প্রথম আগাম অনুমান।
পরিসংখ্যান দফতর জানিয়েছে, কোভিডে তথ্য সংগ্রহে সমস্যা হয়েছে। তাই পরে পূর্বাভাস সংশোধিত হতে পারে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, সঙ্কোচন আরও বেশি হবে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ধারণা, তা হবে ৯.৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, শেষ বার দেশে সঙ্কোচন হয়েছিল ১৯৭৯-৮০ সালে। দেশে খরা এবং ইরানে অস্থিরতার জেরে অশোধিত তেলের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি— এই দু’য়ের ধাক্কায় সে বছর ৫.২ শতাংশ সঙ্কোচন হয়েছিল। কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কা আরও জোরালো।
এদিকে, দীর্ঘ দিন কল-কারখানা বন্ধ থাকায় ও বাজারে কেনাকাটার অভাবে উৎপাদন শিল্প সঙ্কুচিত হবে ৯.৪ শতাংশ। পরিষেবায় সঙ্কোচন প্রায় ২১.৪ শতাংশ। অন্যদিকে, জিডিপি কমলে তার তুলনায় রাজকোষ ঘাটতি এমনিতেই বেড়ে যায়। তার ওপরে লকডাউনে কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় কমেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঋণের বোঝা। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চলতি বছরে রাজকোষ ঘাটতি ৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে। যা লক্ষ্যমাত্রার (৩.৫ শতাংশ) দ্বিগুণ। পূর্বাভাস মেনে ৭.৭ শতাংশ সঙ্কোচন হলে, ৮ শতাংশের কাছাকাছি ঘাটতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা।