মঙ্গলবারই বিধায়কপদে ইস্তফা দেন রাজ্যের মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লা। ছাড়েন মন্ত্রিত্ব। রাজনীতি থেকে তাঁর এই বিরতির খবরে শুরু হয় জোর জল্পনা। পাশাপাশি খেলার মাঠেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজনীতিতে এই মুহূর্তে আর থাকতে খুব একটা আগ্রহী নন। খেলার মাঠ থেকে রাজনীতিতে এলেও নতুন ময়দান খুব একটা উপভোগও করেননি বলেও নাকি বন্ধুবান্ধবদের কাছে জানিয়েছেন। ইস্তফার চিঠিতেও লক্ষ্মী এমন আভাস দিয়েছিলেন যে, আপাতত রাজনীতি থেকেই সরে দাঁড়াতে চাইছেন তিনি।
তবে রাজনৈতিক মহলে যে লক্ষ্মীর রাজনৈতিক ইনিংসের পরিসমাপ্তি ঘটে গিয়েছে, তা মানতে নারাজ অনেকেই। তিনি কি এবার গেরুয়া শিবিরের দিকে হাঁটবেন ? উঠেছে এমন প্রশ্ন। তবে এরই পাশাপাশি খেলার ময়দানে শুরু হয়েছে কৌতূহল। বাংলার বহু যুদ্ধের ঘোড়ার কি ফের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে ? জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি লক্ষ্মী বলেছেন, তিনি আইপিএল দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোচিংয়ে যেতে চান। ইতিমধ্যেই কমেন্ট্রি করার জন্য তাঁর কাছে প্রস্তাব এসেছে এবং আইপিএলে তিনি কয়েকটি ম্যাচে ধারাভাষ্যও দিয়েছেন। এখন প্রত্যেকটি আইপিএল দলেই স্থানীয় বা ভারতীয় কোচেরা রয়েছেন সহকারীর ভূমিকায়। লক্ষ্মী ভারতের হয়ে ওয়ান ডে খেলা ক্রিকেটার। বাংলার হয়ে একাধিক উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স রয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএলে চ্যাম্পিয়নও হয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে বাংলা বা কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে তাঁকে কোচিং ভূমিকায় দেখা যেতে পারে কি না, তা দেখার। কমেন্ট্রিতেও বাংলার অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার যোগ দিয়েছেন। ক্রিকেটের ময়দানে ফিরতে চাইলে সেই পথেও ফিরতে পারেন লক্ষ্মী, শোনা যাচ্ছে এমনটাই। তবে সব চেয়ে বেশি জল্পনা এই প্রশ্ন নিয়ে যে, লক্ষ্মীরতন শুক্ল কি আগামী দিনে ক্রিকেট প্রশাসনে আসতে পারেন ? রাজনীতির ময়দান যদি তিনি সত্যিই ছেড়ে দিতে চান, তা হলে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা সিএবিতে তাঁর আসার ব্যাপারে বাধা থাকবে না। লোঢা কমিটির সংস্কার অনুযায়ী, মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক নেতাদের উপরে ক্রিকেট সংস্থায় পদাধিকারী হওয়ার ব্যাপারে নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজনীতি ছেড়ে দিলে লক্ষ্মীর উপর নিষেধাজ্ঞাও আর থাকবে না। কাজেই তাঁর সিএবিতে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দিনকয়েক আগেই সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় এসেছিলেন লক্ষ্মী। তখন তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর ভোটদানের অধিকার রয়েছে রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায়। সেই কারণেই বার্ষিক সাধারণ সভায় গিয়েছিলেন। তবে তিনি এমন বললেও সে দিন থেকেই আলোচনা শুরু হয়, ক্রিকেট প্রশাসনে তিনি আগ্রহ দেখাতে শুরু করলেন কি না। যথারীতি সেই জল্পনা বাড়ছে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া এবং রাজনীতি থেকে বিরতি নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশে।
বর্তমানে সিএবি সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া। সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের মেয়াদ শেষ হবে সেপ্টেম্বরে। তখন স্নেহাশিসকে প্রেসিডেন্ট করা হবে কি না, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মী যদি ক্রিকেট প্রশাসনে আসার ব্যাপারে আরও আগ্রহ দেখান, ব্যাপারটা আরো নাটুকে হতে চলেছে।
আবার ময়দানের ওয়াকিবহাল মহলের মতে, লক্ষ্মীরতন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের খুবই ঘনিষ্ঠ। সৌরভ অসুস্থ হওয়ার পরে তাঁকে দেখতে হাসপাতালেও ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। এক সঙ্গে বাংলা দলের হয়েও অনেক ম্যাচ খেলেছেন। দাদা-ঘনিষ্ঠ লক্ষ্মীর ভবিষ্যৎও কি তা হলে সৌরভের পরবর্তী পদক্ষেপের সঙ্গে জড়িত ? এমন প্রশ্নও ঘুরছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ, সৌরভ রাজনীতিতে যোগ দিতে পারেন, বঙ্গে বিজেপির মুখ হয়ে উঠতে পারেন, এমন জল্পনা বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছে। কারও কারও মত, যদি তা ঘটে, লক্ষ্মী দাদার ‘টিমে’ যোগ দিলে খুব অবাক হওয়ার থাকবে কি? আর যদি সৌরভের রাজনীতিতে যোগদান না-ও ঘটে, ক্রিকেট প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে থেকে যেতে চাইবেন বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্ট। তখন দাদার ঘনিষ্ঠ অনুজ হিসেবে লক্ষ্মী প্রশাসকের নতুন ইনিংসে নামতে পারেন, এমনটাও অনুমান করা হচ্ছে।