অবশেষে স্বস্তি ফিরছে রাজ্যবাসীর বুকে। সম্ভবত বৃহস্পতি বা শুক্রবারই, কলকাতা বিমানবন্দরে আসতে পারে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার বানানো ভ্যাকসিন। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে এই খবর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে এই ব্যাপারে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে ভ্যাকসিন বণ্টন, বিতরণ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং প্রকারপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাতে ঠিক হয়েছে, স্বাস্থ্যদপ্তর তার নিজস্ব মানবসম্পদ ও পরিকাঠামো ব্যবহার করেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই জরুরী কাজটির দায়িত্ব কাঁধে নেবে।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে রাজ্য সরকার প্রথম দফায় এই ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কোভিড যোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছে জেলাশাসক ও পুরসভাগুলির প্রশাসকদের। মঙ্গলবারই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসক ও পুরসভাগুলির কমিশনারদের বৈঠক করে দ্রুত এই তালিকা তৈরি করতে বলে দেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম দফায় বিনা পয়সায় কোভিড যোদ্ধাদের এই ভ্যাকসিন দিতে চায়। রাজ্য সরকার কোভিড যোদ্ধাদের একটা তালিকা তৈরি করেছে। আমরা চাই নিখুঁত হোক সেই তালিকা।’ বৈঠকে মুখ্যসচিব আরও জানান, এখনও কয়েকদিন সময় রয়েছে। পুরকর্মী, সাফাই কর্মী, স্বাস্থ্য কর্মী, রেভিনিউ কর্মী-যাঁরাই কোভিড যুদ্ধে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন তাঁদের একজনের নামও যেন বাদ না-পড়ে। এই তালিকা ভালো করে পরীক্ষা করে সরকারি পোর্টালে আগামী দু’-একদিনের মধ্যেই তুলে দিতে হবে। যাতে কেন্দ্র এ নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনও খামতির অভিযোগ তুলতে না-পারে। কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডেই তালিকা ধরে কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করবে পুরসভা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশের সঙ্গে শহরের সাফাইকর্মীদের মতো প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধাদের টিকাকরণের প্রথম তালিকায় রাখা হয়েছে। এর পর নবান্নের গাইড লাইন মেনে ওয়ার্ডে ৫০ ঊর্ধ্ব, কো-মর্বিডিটি আছে এমন প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের করোনার টিকা দেবে পুরসভা। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা নিয়েও বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বিমানবন্দরে প্রতিষেধক এসে পৌঁছোনোর পরই স্বাস্থ্য দপ্তরের রেফ্রিজারেটেড বা ভ্যাকসিন ভ্যানে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সেগুলি বাগবাজারে মেডিক্যাল স্টোরে নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। জেলাগুলিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের যে সব ডিস্ট্রিক্ট রির্জাভ স্টোর রয়েছে, সেগুলিতেও পরে ভ্যাকসিন রাখা হবে। এগুলিতে -৩ ডিগ্রি বা -৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রা রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে। ড্রাই আইসও ভ্যাকসিনের সংরক্ষণে ব্যবহৃত হবে। ভ্যাকসিন যাবে কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজেও। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যায় ভ্যাকসিন ভ্যান রয়েছে। একটাই সুবিধা, ধাপে ধাপে টিকাকরণ হবে। ফলে ভ্যাকসিন পরিবহণ তথা ‘লজিস্টিক্সের’ কাজটা সামাল দেওয়া সমস্যা হবে না। স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিবহণ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সুশান্ত পালের আশ্বাস, ‘আমরা সরকারি পরিকাঠামো দিয়েই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভ্যাকসিনের পরিবহণের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করব। কোভিডের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইতে আমরা তৈরি রয়েছি।’ উল্লেখ্য এদিনই ভ্যাকসিন নিয়ে প্রত্যেকটি হেলথ ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমিত্র ঘোষ। ভ্যাকসিনের জন্য সামনের সারিতে থাকা পুরকর্মীদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে ওই মিটিংয়ে। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেকটি বিভাগকে সেই কর্মীদের অন্তত ৮০ শতাংশের তালিকা পুরসচিবের কাছে জমা করতে বলা হয়েছে। একটি টাস্ক ফোর্সও তৈরি করেছে পুরসভা। আগামী শুক্রবার সেই টাস্ক ফোর্সের বৈঠক হওয়ার কথা।
এপবিষয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানান , ‘পুরসভা প্রস্তুত। পুরসভা বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিনেশনের কাজ করে। ফলে কোল্ডস্টোরেজ প্রস্তুত রয়েছে। অনুমতি পেলেই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। যে স্বাস্থ্যকর্মী, জঞ্জাল সাফাইকর্মীরা সামনের সারিতে থেকে মাঠে নেমে কাজ করেছেন, তাঁদের টিকাকরণ আগে হবে।’ কেন্দ্রের টিকাকরণ শুরুর দিন ঘোষণার পর মঙ্গলবারই ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে পুরভবনে দীর্ঘ বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওয়ার্ডভিত্তিক কোভিডের ‘ফ্রন্টলাইনার’ ও কো-মর্বিডিটিযুক্ত ব্যক্তির তালিকা দফায় দফায় স্বাস্থ্যদপ্তরে জমা দেবে। এবং কেন্দ্রীয় সরকারের টিকাকরণ অ্যাপের সঙ্গে সমন্বিতভাবেই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে। তবে টিকা দেওয়ার পর যদি কারও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তবে তাদের পুরসভ…