২০১৮ সালে ‘একতাই সম্প্রীতি’ থিমের ট্যাবলো দিল্লীর রাজপথে জায়গা পায়নি। ২০২০ সালেও রাজ্যের পাঠানো প্রকল্পের ট্যাবলোকেও গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ফের জায়গা পাচ্ছে বাংলার ট্যাবলো। সেই ট্যাবলোর থিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের ‘সবুজ সাথী’। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল বিলির যে প্রকল্প গোটা বিশ্বের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে।
সাধারণত কোনও রাজ্য নিজের সরকারি প্রকল্পকে প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোর থিম করতে চাইলে তাতে কুচকাওয়াজের দায়িত্বে থাকা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আপত্তি তোলে। গত বছর বাংলার ট্যাবলো খারিজ হয়ে যাওয়ার পিছনে এটা অন্যতম কারণ ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, ‘সবুজশ্রী’, ‘জল ধরো, জল ভরো’-র মতো প্রকল্পকে রাজ্যের ট্যাবলোর থিম করতে। রাজ্যের ট্যাবলো জায়গা না পাওয়ায় খোদ মুখ্যসচিব প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিবকে চিঠি লিখেছিলেন।
২০১৫-তেও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’-কে তুলে ধরতে প্রবল উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু সে সময়ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাছাই কমিটি আপত্তি তোলে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অবস্থান অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ রাজ্য সরকারের কোনও প্রকল্পের প্রচারের জায়গা নয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ‘সবুজ সাথী’ রাজ্যের প্রকল্প হলে এ বার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তাতে ছাড়পত্র দিয়েছে। রাজ্যের প্রস্তাব অনুযায়ীই ঠিক হয়েছে, রাজপথে বাংলার ট্যাবলোর সঙ্গে ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায়’ গানটি বাজবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত সপ্তাহেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্মসচিব সতীশ সিংহ নবান্নকে চিঠি দিয়ে বাংলার ট্যাবলো কুচকাওয়াজে থাকছে বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কর্তারা বলছেন, এর সঙ্গে কোনও রকম রাজনীতির সম্পর্ক নেই। বিশেষজ্ঞদের কমিটিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি সূত্রের খবর, ট্যাবলোয় দেখানো হবে, ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের দিকে সাইকেলে চেপে এগিয়ে চলেছে। সামনেই থাকবে নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। ছাত্রছাত্রীদের বইপত্র নিয়ে পড়াশোনা করতেও দেখা যাবে।
এখানেই শেষ নয়। শিক্ষাই যে ‘সবুজ সাথী’-র প্রধান লক্ষ্য, তা বোঝাতে বইয়ের সারির সঙ্গে দেখানো হবে কলমের নিব। ট্যাবলোর পিছনে থাকবে কলকাতার ‘স্কাইলাইন’। রাজ্যের ট্যাবলোর শিল্পী বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আলোকের এই ঝর্ণাধারায় গান ট্যাবলোর সঙ্গে বাজবে, সেটা ভেবেই সবথেকে ভাল লাগছে। একটা ট্যাবলো চোখের সামনে মিনিট খানেক থাকে। তার মধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের ছবি, রবীন্দ্রসঙ্গীত মিলে রাজপথে একটা অন্য পরিবেশ তৈরি হবে।’
এ বার তথ্য-সংস্কৃতি দফতর থেকে ট্যাবলোর জন্য ‘সবুজ সাথী’-র সঙ্গে ‘সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ’-র মতো থিম মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে প্রস্তাব হিসেবে গিয়েছিল। কিন্তু নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘সবুজ সাথী’-তেই সিলমোহর দেন। ২০২০-তে বাংলার ট্যাবলো প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে বাদ পড়লেও, তার আগে ২০১৪ সালে ‘ছৌ’ এবং ২০১৬-য় ‘বাংলার বাউল’ থিমের ওপরে ট্যাবলো সাজিয়ে প্রথম পুরষ্কার জিতেছিল বাংলা।
বস্তুত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই ২০১২ থেকে বাংলা প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিতে শুরু করে। তার আগে বাম জমানায় রাজ্য কখনও তেভাগা আন্দোলন, কখনও পঞ্চায়েতি রাজ, কখনও পরমাণু পরীক্ষার প্রতিবাদে ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’-এর মতো ট্যাবলো করতে চাওয়ায় কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধ বাধে। রাজ্য ট্যাবলো পাঠানোই বন্ধ করে দেয়। মমতা মুখ্যমন্ত্রীর হওয়ার পরে, ২০১২-য় ১২ বছর পরে ‘শান্তিনিকেতন’-এর থিমে রাজ্যের ট্যাবলো দেখা গিয়েছিল।