’আত্মনির্ভর ভারতের দেশীয়’ টিকার গৌরব হয়তো ষোলো আনা। কিন্তু সায়েন্টিফিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ‘আন্তর্জাতিক মাপকাঠি’ কোভ্যাক্সিন মানল কোথায়? এই প্রশ্নে ইতিমধ্যেই সরকারকে বিঁধছেন বিরোধীরা। ইতিউতি জিজ্ঞাসা বিজ্ঞানী মহলেও।
অনেকের প্রশ্ন, তবে কি টিকার ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর ভারতের বিজ্ঞাপন’ হিসেবেই গবেষণাপত্র প্রকাশ ছাড়া সায় দেওয়া হল কোভ্যাক্সিন প্রয়োগে? কারণ, সেটি ছাড়া, গবেষণার বিশ্বাসযোগ্যতার একশো শতাংশ গ্যারান্টি কোথায়?
বিশ্বে ভ্যাকসিন-দৌড়ে প্রথম তিনে থাকা এক সংস্থার কর্তার কথাতেও, ‘‘খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিষয়টি যখন জনস্বাস্থ্য!’’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন যদিও আজ টুইট করেছেন, ‘‘এই রকম জটিল বিষয়েও রাজনীতি খোঁজা হচ্ছে। লজ্জাজনক!’’
শনিবারই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে করোনা-টিকা কোভ্যাক্সিন। যৌথ ভাবে যা তৈরি করেছে হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেক ও কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। প্রশ্ন উঠছে, বিজ্ঞান গবেষণার নীতি মেনে এই দেশজ টিকার পরীক্ষার ফলাফল (ট্রায়াল-রিপোর্ট) প্রকাশিত হয়েছে কোন সায়েন্টিফিক জার্নালে? অন্তত রবিবার পর্যন্ত তা ঘোষণা করেনি ভারত বায়োটেক। তাদের ওয়েবসাইটেও এর উত্তর অমিল। বরং নীচের দিকে ‘ডিসক্লেমার’ হিসেবে লেখা রয়েছে: ‘‘কোনও ‘পিয়ার রিভিউ’ হয়নি। অস্থায়ী রিপোর্ট। চূড়ান্ত রিপোর্টে অন্য ফল দেখা যেতেই পারে।’’
বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য, যদি এক জনকেও এই টিকা প্রয়োগ করা হয়, তাতেও বিজ্ঞানের নীতি মেনে চলা উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন, কোনও গবেষণার রিপোর্ট সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশ করার কারণই হল, গোটা বিশ্বের কাছে গবেষণাটির স্বচ্ছতা বজায় রাখা। অতিমারি পরিস্থিতিতে কী ভাবে প্রচলিত নিয়ম না-মেনে দেশজ ভ্যাকসিনটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ-ও বলেছেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত’, প্রমাণ করতেই কি এই বেপরোয়া পদক্ষেপ!