‘কুপুত্র থেকে নিপুত্র ভাল!’ পুত্রসম শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের পর এবার এভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ‘নন্দীগ্রামের মা’ ফিরোজা বিবি।
গত ১৮ ডিসেম্বর মেদিনীপুরের জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে নন্দীগ্রামের প্রাক্তন বিধায়ক শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে আর কথা হয়নি ফিরোজার। তাঁর কাছে এটা স্পষ্ট যে বিধানসভা ভোটে শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই তাঁকে নন্দীগ্রামের ময়দানে লড়াইয়ে নামতে হবে। অতএব কোনও পিছুটান না রেখে সন্তানহারা মা বলছেন, ‘কুপুত্র থেকে নিপুত্র ভাল।’ তৃণমূলেই থেকে যাওয়া ফিরোজা আরও বলছেন, ‘লড়াইয়ে আমার ভূমিকা তো থাকবেই! আমি এক সন্তান হারিয়ে হাজার সন্তান পেয়েছি। তাই এক সন্তানের বিরুদ্ধে যদি আমাকে লড়তে হয় তো লড়ব! আমার অবস্থানে কোনও বদল হবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। সেই তালিকায় ছিলেন ফিরোজা বিবির পুত্র শেখ ইমদাদুল। পরে ২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভার উপনির্বাচনে এই ‘শহীদের মা’ হিসেবে তাঁকেই প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৯,৪৫৯ ভোটে জয় পান তিনি। ২০০৯ সালের উপনির্বাচনের পর ২০১১ সালের ভোটেও নন্দীগ্রাম থেকেই বিধায়ক হয়েছিলেন ফিরোজা। পরে তাঁর জায়গাতেই নন্দীগ্রামে শুভেন্দুকে প্রার্থী করেন মমতা। বিনা বাক্যব্যয়ে দলনেত্রীর নির্দেশ মেনে সরে যান নন্দীগ্রাম আন্দোলনে নিহত শহিদের মা। তাঁকে প্রার্থী করা হয় পাঁশকুড়া-পূর্ব আসনে। সেই ভোটেও জেতেন তিনি।
এই গত ১০-১২ বছরে শুভেন্দু-ফিরোজার সম্পর্ক ছিল মা-ছেলের মতোই। কিন্তু পুত্রসম শুভেন্দুর দলবদলে রুষ্ট হয়েছেন ‘মা’। তিনি এখন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন ভোটের ময়দানে লড়াইয়ের। তাঁর কথায়, ‘মুখের আস্ফালন দেখিয়ে লাভ নেই। সম্মুখসমরে দেখা হবে।’ বিজেপি নেতাদের ভাষা ব্যবহারও নিয়েও বিস্তর আপত্তি রয়েছে তাঁর। ফিরোজা বলছেন, ‘বলা হচ্ছে খেরিয়া হঠাও, দেশ বাঁচাও। আমরা কি খেরিয়া?’ দল যদি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আগামী বিধানসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করতে চায়? ফিরোজার বক্তব্য, ‘দল কী করবে না করবে সে বিষয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে প্রয়োজনে লড়াই করতে হবে।’ তাঁর সাফ কথা, ‘কে আমার সন্তান, কে বাপ, কে ভাই, কে ছেলে— এখন এসব দেখার সময় নেই। আমি দিদির সঙ্গেই আছি।’