দলবদল-দলত্যাগের নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক আবহাওয়ার উত্তাপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়। এবার দলত্যাগের রেশ ছড়াল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের খাসতালুক গুজরাতেই। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে বিদায় জানিয়ে দিয়ে মঙ্গলবার দল ছাড়লেন গুজরাতের গেরুয়াশিবিরের সাংসদ মনসুখভাই বাসোভা। সোমবারই দলের রাজ্য সভাপতি সিআর পাতিলের কাছে দল থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই সাংসদ পদেও ইস্তফা দেবেন। যদিও কী কারণে আচমকাই দল ছাড়লেন তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি বিজেপিত্যাগী সাংসদ। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত সজোর ধাক্কা দিয়েছে বিজেপির অন্দরে।
উল্লেখ্য, মোদী-শাহের খাসতালুক গুজরাতে আদিবাসী নেতা হিসেবে যথেষ্টই জনপ্রিয় মনসুখভাই বাসোভা। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেলের একদা ‘গড়’ তথা কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ভারুচ লোকসভা আসন থেকে ১৯৯৮ সালের উপনির্বাচনে বিজেপির হয়ে জিতে কার্যত হইচই ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে টানা জিতে আসছেন মনসুখভাই। ৬৩ বছর বয়সী এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করে আসছেন আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায়। কিন্তু সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু সংক্রান্ত মন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য প্রকাশ্যে আসে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন মনসুখভাই। ওই চিঠিতে ভারুচের বিজেপি সাংসদ সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, ‘কৃষক ও আদিবাসীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।’ ওই বিজ্ঞপ্তিতে ১২১টি গ্রামকে ইকো-সেনসেটিভ জোনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু সংক্রান্ত মন্ত্রক। অবিলম্বে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই চিঠির কোনও জবাব না আসায় এবং তাঁর দাবি মেনে না নেওয়ায় অসন্তোষ বাড়ে তাঁর। বিজেপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন দলের প্রবীণ সাংসদ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সিআর পাতিলের কাছে পাঠানো ইস্তফায় মনসুখ ভাই বাসোভা লিখেছেন, ‘আমার ভুলের কারণে দলের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, তার জন্য দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি দলের একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবেই এতদিন কাজ করছি। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।’
কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ক্ষোভে ফুঁসছে কৃষকরা। এখনও চলছে আন্দোলন। এমতাবস্থায়, কৃষক ও আদিবাসীদের স্বার্থে মনসুখভাই বাসোভার মতো আদিবাসী বিজেপি ছাড়লেন। এই সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরের কাছে একটি বড় ধাক্কা, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।