কাগজে-কলমে গত সপ্তাহে বিজেপিতে গেলেও তৃণমূলের দায়িত্বশীল পদে থাকাকালীন সেই ২০১৪-১৫ সাল থেকেই গেরুয়া-শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন তিনি। এ কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আর তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, এক দলে ক্ষমতায় থেকেও অন্য দলের সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন যিনি, তিনি বিশ্বাসঘাতক ছাড়া আর কিছু নয়। এবার তৃণমূলের সেই অভিযোগকেই আরও একবার ঠিক বলে প্রমাণ করে দিলেন সৌমিত্র খাঁ। স্ত্রী সুজাতা নয়, উনিশের ভোটে তাঁকে বিষ্ণুপুর থেকে জিততে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি শোনা গেল বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য যুব মোর্চা সভাপতির মুখে। বৃহস্পতিবার কাঁথির জনসভায় শুভেন্দুকে পাশে নিয়ে এই কথাই বললেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শুভেন্দু সেদিন ছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেতা। লোকসভা ভোটের আগে অন্য তৃণমূল নেতাদের মতো রাজ্যের শাসকদলকে জেতানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যের মন্ত্রীও। কিন্তু সদ্য দলবদল করা অনুজ দলীয় কর্মীকেও তিনি সাহায্য করতে পিছপা হননি। অন্তত বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ’র বক্তব্যে তেমনই বোঝা গেল। কাঁথির জনসভায় বিষ্ণুপুরের সাংসদ বলেন, ‘সেদিন আমি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ পর তৃণমূলের একজন নেতাকেই ফোন করেছিলাম – শুভেন্দুদা। বলেছিলাম, দাদা, আপনি বিষ্ণুপুরে প্রচার করতে আসবেন না। উনি আমার কথা শুনে আমার সংসদীয় এলাকায় প্রচার করতে আসেননি। তাই আমি জিততে পেরেছিলাম।’
বিপক্ষ দলের প্রার্থীকে জিততে সাহায্য করায় সেদিনের অবদানের কথা জনসমক্ষে এনে শুভেন্দুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন বটে সৌমিত্র খাঁ, কিন্তু তাঁর এই কৃতজ্ঞতা স্বীকার তুলে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন। গত শনিবার মেদিনীপুর কলেজমাঠে দলবদলের মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন যে ২০১৪ সাল থেকেই তিনি অমিত শাহর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। এবার সৌমিত্র স্বীকারোক্তিতে স্পষ্ট, তৃণমূলের একজন সদস্য, জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি বিজেপিতে নতুন যোগ দেওয়া অনুজপ্রতিম সহকর্মীকেই সাহায্য করেছিলেন। নিজে বিষ্ণুপুরে প্রচার করতে না গিয়ে কিছুটা কণ্টকমুক্ত করেছিলেন সৌমিত্রর জয়ের পথ। তাই তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল যে বিশ্বাসঘাতকতা বা অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলছে, তা যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, সে কথাই প্রমাণ হয়ে গেল এবার।