১৯শে ডিসেম্বর মেদিনীপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি তাঁর অনুগামীরাও তৃণমূল ছেড়ে হাজির হয়েছে গেরুয়া শিবিরের ছত্রছায়ায়। কিন্তু তারপরেই বেড়েছে সমস্যা। কোথাও শুভেন্দুর অনুগামীদের কার্যালয় ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, তো কোথাও মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। নৈহাটি, নারায়ণগড়, মেদিনীপুর, কেশপুর, জয়পুর, আরামবাগ, রায়না, যত্রতত্র শুভেন্দু অনুগামীদের উপর আঘাত হানছে গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা। আর শোনা যাচ্ছে, এইসব নিয়ে তেমন ওয়াকিবহাল নন সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে প্রশ্নচিহ্ন। নিজ অনুগামীদের মার খেতে দেখেও যে শুভেন্দু চুপ করে আছেন, এতে তাঁর অনুগামীরা আদৌ পাশে থাকবেন তো ? এমন সন্দেহই দানা বাঁধছে রাজনৈতিক মহলের কথাবার্তায়।
গত শনিবারই পদ্ম-পতাকা হাতে তুলে নেন শুভেন্দু। মাঝে বয়ে গিয়েছে মাত্র ২টি দিন। অথচ এও দুই দিনেই রাজ্যের ১০-১২টি জায়গায় বিজেপি কর্মীদের হাতেই আক্রান্ত হচ্ছেন শুভেন্দু অনুগামীরা, এমনই অভিযোগ এসেছে। প্রথম দিকে এই আক্রমণ তৃণমূলের হামলা বলে চালাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে আক্রমণ থামেনি। বরঞ্চ তা আরও বেড়েই চলেছে। সব থেকে বড় ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে। সেখানে গতকাল রাতে শুভেন্দুর অনুগামীদের কার্যালয়ে চড়াও হয়ে বিজেপিকর্মীরা। বাদানুবাদ থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। তারপর বাঁশ, লাঠি, রড় দিয়ে মারধর করা হয় শুভেন্দু অনুগামীদের। ভাঙচুর চালানো হয় সেই কার্যালয়ে। শুভেন্দুর ছবি, পোস্টার এবং ফ্লেক্স ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির নারায়ণগড় উত্তর মণ্ডলের সভাপতি সত্যজিৎ দে জানিয়েছেন, ‘যারা আক্রান্ত হয়েছেন বলে শুনেছি তাঁরা কেউই বিজেপির কর্মী নন। বিজেপিতে যোগদানের একটি পদ্ধতি আছে। আর সেই পদ্ধতি মেনে কেউ যোগদান করেননি। কাউকে আমাদের দলে আসতে হলে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আসতে হবে।’
এই ঘটনার কারণ কী ? সূত্রপাত কোথায় ? স্বভাবতই উঠেছে প্রশ্ন। শুভেন্দু বিজেপিতে এলে তাঁর অনুগামীরাও যে বিজেপিতে আসবেন সেটাই তো স্বাভাবিক। তাহলে এমন উলটপুরাণ কেন ? সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, অনেকের ধারণা – এর বীজ লুকিয়ে রয়েছে বামফ্রন্ট আমল থেকেই। বিরোধ দীর্ঘদিনের। বাম জমানার অবসানে এই শুভেন্দু অনুগামীরাই নিজেদের কর্তৃত্বে বামকর্মীদের দমন করে রেখেছিলেন এলাকায়। পরে সেই বামকর্মীরাই হাতে বিজেপির পতাকা তুলে নেন। একই সঙ্গে বামেদের ধাঁচে আর আরএসএসের সহায়তায় এলাকায় সংগঠনও গড়ে তোলেন। তার ফসল তাঁরা পেয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে। এবার শুভেন্দু-অনুগামীরা তৃণমূল ছাড়তেই তাঁদের মাথার ওপর থেকে সরে গিয়েছে শাসক দলের ছত্রছায়া। পাওয়া যাচ্ছে না পুলিশের সাহায্যও। আর এই সুযোগে নিজেদের পুরোনো রাগ মিটিয়ে নিচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। যত্রতত্র মার খাচ্ছেন শুভেন্দু-অনুগামীরা। বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু নিজে মুখ না খোলায় পরিস্থিতি আরও জটিলতার দিকে। তাই খোদ শুভেন্দুর প্রতি অভিমান বেড়েছে অনুগামীদের। অনেকে আবার পরিস্থিতি দেখে ফের তৃণমূলে ফিরে আসতে চাইছেন। আর যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাঁরাও তাঁদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন।