গত সেপ্টেম্বরে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক দলিত যুবতীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিল গোটা দেশ। নির্যাতিতার মৃত্যুর পরে যোগীর পুলিশের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছিল সর্বত্রই। আর তারপরই অক্টোবর মাসে সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল হাথরস কাণ্ডের তদন্তভার। অবশেষে শুক্রবার হাথরাসের গণধর্ষণ মামলার চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই। তাতে চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ছাড়াও তফসিলি জাতি-উপজাতির প্রতি নৃশংসতা রোধ আইনেও অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু এবার নির্যাতিতার পরিবার জানিয়ে দিল, গ্রাম ছাড়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তাঁরা।
কিন্তু কেন? হঠাৎই গ্রাম ছাড়ার কারণ কী? নির্যাতিতার এক দাদার কথায়, ‘চার অভিযুক্তের পরিবার খুবই প্রভাবশালী। গ্রামে দলিত পরিবারও বেশি নেই। সব মিলিয়ে যে চার-পাঁচটি পরিবার রয়েছে তারা ঝামেলা এড়াতে আমাদের এড়িয়ে চলে। বাকি ৬৩টি পরিবারই উচ্চবর্ণের। তারা আমাদের সঙ্গে কথাও বলে না। শুক্রবার চার্জশিট পেশ হওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।’ আপাতত সিআরপিএফের নিরাপত্তা কর্মীরা পাহারায় রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নির্যাতিতার দাদার আর্জি, সরকার যদি দিল্লীতে তাঁদের জন্য একটি বাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারে তাহলে গ্রাম ছাড়বেন তাঁরা। ওই গ্রামে থাকা যে আর নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষে নিরাপদ নয়, সেই দাবি করেছেন তাঁদের আইনজীবীও। পাশাপাশি মামলাটি দিল্লীতে সরিয়ে নেওয়ার দাবিও জানাচ্ছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চার উচ্চবর্ণের যুবকের বিরুদ্ধে হাথরসের দলিত যুবতীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়। গণধর্ষণের পরে যুবতীর ওপরে বীভৎস অত্যাচারও করা হয়। যার ফলে তাঁর শরীরে নানা জায়গায় হাড় ভেঙে যায়। সারা শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। পরে দিল্লীর সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নির্যাতিতার। এই ঘটনায় গর্জে ওঠে গোটা দেশ। দোষীদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি দেওয়ার দাবিতে মুখর হয় সবাই। এরই মধ্যে নির্যাতিতার বাবাকে জোর করে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। পরে যোগী সরকার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করে হাথরাসের তরুণীর ধর্ষণই হয়নি। স্রেফ রাজ্য সরকারের বদনাম করতে ও হিংসা ছড়াতেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযোগ বকলমে খারিজ করে দেয় সিবিআই। তাদের চার্জশিটে গণধর্ষণ ও খুনেরই উল্লেখ করা হয়েছে।