নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে হওয়া কৃষক বিক্ষোভকে ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই তুলকালাম কাণ্ড চলছে দিল্লীতে। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে দেশের রাজধানীতে এ যেন আর এক ‘কুরুক্ষেত্র’। যাতে ‘রথী’, ‘মহারথী’রা প্রত্যেকেই কৃষক। দাবি আদায়ের লড়াইয়ে সময় লাগতে পারে অনেক। তার ওপর রয়েছে করোনা এবং উত্তর ভারতের কড়া শীত। এ সব কথা মাথায় রেখেই বেশ কয়েক মাসের রসদ সঙ্গে নিয়েই দিল্লীর দরবারে উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা।
মঙ্গলবার কৃষকদের বিক্ষোভ ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। বিজ্ঞানভবনে এক দফা আলোচনাও হয়েছে সরকারের সঙ্গে। কিন্তু তাতে বরফ গলেনি। বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নয়া ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহারে নারাজ কেন্দ্র। উল্টো দিকে অনড় কৃষকরাও। টানাপড়েন যে আরও কত দিন চলবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই আগেভাগে পরিকল্পনা করে খাবার, জল, বালিশ, বিছানা, কম্বল, ত্রিপল, ওষুধ, অ্যাম্বুল্যান্স— এ সব গুছিয়ে নিয়েই পথে নেমে পড়েছেন পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের কৃষকরা।
বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে রাজা-মহারাজাদের অভিযান। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দীর্ঘ কাল ধরে সীমানা অবরুদ্ধ করে রাখার কৌশল। এমন সব অভিযানে সঙ্গে থাকত প্রচুর খাবারদাবার, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং নিত্য প্রয়োজনীয় অন্য জিনিসপত্রও। ইতিহাসে এমন বর্ণনা মেলে বিস্তর। কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ অভিযানেও ঠিক যেন সেই ছবি। হরিয়ানা-দিল্লীর সিঙ্ঘু সীমানায় জিটি কার্নাল রোডের পাশে সাজানো বিক্ষোভকারীদের একের পর এক শিবির।
দাঁত মাজার ব্রাশ, মাজন থেকে শুরু করে খাবার, পানীয় জল, ওষুধ বা ঘুমনোর জন্য প্রয়োজনীয় কম্বল, বিছানা— সবই মজুত কৃষকদের ট্রাক্টরে। জামাকাপড় কাচার জন্য রয়েছে ডিটারজেন্ট এবং সাবান। তা শুকনোর জন্য সার দিয়ে দাঁড় করানো ট্রাক্টরে বাঁধা হয়েছে দড়ি। এক ঝলকে দেখলে মনে হবে রাজপথের পাশেই নতুন কোনও জনপদ।
সকালে ঘুম ভাঙার পর বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে চা, ক্ষীর ইত্যাদি সরবরাহ করছে খালসা এড ফাউন্ডেশন। দেওয়া হচ্ছে মিনারেল ওয়াটারের বোতলও। ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা অমরপ্রীত সিংহ বলছেন, ‘খাবার ছাড়াও মহিলাদের জন্য আমরা ২০টি মোবাইল শৌচাগার বসিয়েছি। কৃষকরা এখানে দিনরাত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আমরা চাই না ওঁরা কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হোন।’ বিক্ষোভকারী কৃষকদের জন্য খোলা হয়েছে লঙ্গরখানাও।