গত কয়েকদিন যাবৎ রাজধানীতে চলতে থাকা লাগাতার কৃষক বিক্ষোভের পর আজ দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে কৃষক ইউনিয়নের নেতাদের বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। নানা আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন প্রতিবাদী কৃষকদের প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই বৈঠক থেকে কোনও রফাসূত্র মিলল না। এদিনের বৈঠকে একটি কমিটি গড়ে কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কৃষি আইন নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু কৃষকদের তরফে স্পষ্টতই জানিয়ে দেওয়া হয়, আর কোনও কমিটি গড়ে আলোচনার সময় এখন আর নেই। দু’তরফের পরবর্তী বৈঠক হবে আগামী ৩ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার। কোনও সমাধানসূত্র না বেরোনো পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেই জানিয়েছেন প্রতিবাদী কৃষকরা।
গতকাল রাতে কৃষিমন্ত্রী তোমর বলেছিলেন, “গত ১৩ নভেম্বর জানিয়েছিলাম, ৩ ডিসেম্বর আলোচনায় বসব আমরা। কিন্তু কৃষকেরা এখন প্রতিবাদের মেজাজে!” তাই দিনদুয়েক আগেই বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। তিনি বলেছেন, “আপনাদের অনুরোধ, প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরে কথাবার্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটুন।” যদিও তার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের একপ্রস্ত নয়া কৃষি আইনের ফায়দা বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারপর এদিনের বৈঠকে নতুন কমিটি গড়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন কৃষিমন্ত্রী তোমর। কিন্তু তা সমূলে প্রত্যাখ্যান করেন কৃষক প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, সোমবারই তোমরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর শর্তসাপেক্ষ আলোচনা-প্রস্তাব রবিবার ফিরিয়েছিলেন কৃষকেরা। চাপটা বাড়ে তখনই। তার উপর ‘গুরুপরব’-এর কারণে অমৃতসর অঞ্চলের যে চাষিরা এত দিন আসেননি, তাঁরাও আজ সকালের মধ্যে রাজধানীর প্রতিবাদে সামিল হন। এর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বিরোধী শিবিরের চাপ-ও বাড়ছে।
গতকালই যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করেন, “যখনই মোদী-শাহ কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে কিছু বলতে চাইবেন তখনই মনে করিয়ে দেব, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলেছিল কেন্দ্র সরকার৷ বর্তমান হারে চললে ২০২৮ সালের আগে এই আয় দ্বিগুণ হবে না৷ দিদির বাংলায় কিন্তু গত ৯ বছরে কৃষকদের আয় তিনগুণ হয়ে গিয়েছে৷ প্রতিশ্রুতি নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কাজ করে দেখিয়েছে৷”
মোটের উপর বিরোধী-শিবির থেকে এভাবেই লাগাতার চরম সমালোচনা ধেয়ে এসেছে মোদী সরকারের দিকে। তবে রাজ্যসভার অধিবেশনে বিতর্কিত কৃষি আইন পাশ করানোর বিরোধিতায় ডেরেক যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার পর বর্তমান আবহে তাঁর প্রতিক্রিয়ার দিকে বিশেষ নজর সব পক্ষেরই। সব মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হত কেন্দ্রকে।