চলতি বছরে করোনা আবহের মধ্যে আর রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঝুঁকি নিতে চাইছে না নবান্ন। গতকাল উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর আর সশরীরে হাজির থেকে ক্লাস করা হবে না। আপাতত অনলাইনেই চলবে পড়াশোনা। প্রথম সেমিস্টারের পঠনপাঠনও শুরু হবে অনলাইনেই। বোঝা কমানো হবে পাঠ্যক্রমের। কোন বিষয়ের কোন অংশে কতটা পাঠভার লাঘব করা যায়, সেই ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।
রবিবারের বৈঠকের পরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন অনলাইন ক্লাস ছাড়া গতি নেই। ছাত্রছাত্রীদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে ক্লাস করার জন্য উপাচার্যেরা আরও সময় চেয়েছেন। তাঁদের কেউই এখন হস্টেল খুলতে চাইছেন না। তাই শুধু ক্লাস নয়, আপাতত পরীক্ষাও অনলাইনে হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে পুরো বিষয়টি জানাব।’’
ইউজিসি নভেম্বরে নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু করতে বলেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের পক্ষে নভেম্বরে শিক্ষাবর্ষ চালু করা সম্ভব নয়। কারণ, বাংলায় নভেম্বর উৎসবের মাস। নতুন শিক্ষাবর্ষ চালু হতে পারে ডিসেম্বর মাসে। এই প্রেক্ষিতেই শিক্ষামন্ত্রী আগে জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হতে পারে। পুরো বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, ডিসেম্বরে কলেজ খোলার ব্যাপারে পার্থবাবুর সে-বারের ঘোষণায় বহু কলেজের অধ্যক্ষ-শিক্ষকই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, করোনাকালে যথাবিধি সতর্কতা অবলম্বন করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তাঁরা পঠনপাঠন চালু করতে রাজি। একসঙ্গে যাতে পড়ুয়া ও শিক্ষকের ভিড় না-হয়, সেই জন্য প্রয়োজনে কলেজের সময়সীমা বাড়িয়ে বিভিন্ন শিফ্টে কাজ চালানোর পরিকল্পনাও করছিল অনেক কলেজ। শ্রেণিকক্ষ, কলেজ-চত্বর জীবাণুমুক্ত করে, বিধি মানতে হাতশুদ্ধি-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে তৈরি হচ্ছিল তারা। ডিসেম্বরে কলেজ খোলার ব্যাপারে পার্থবাবুর মৌখিক ঘোষণা-সহ পুরো প্রসঙ্গই ওঠে এ দিনের বৈঠকে।
কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। তাই এখনই ছাত্রছাত্রীদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে পঠনপাঠন চালু করা বাস্তবসম্মত হবে না বলে জানান উপাচার্যেরা। তাঁদের অনেকের বক্তব্য, ছাত্রছাত্রীরা এলে হস্টেলও চালু করতে হবে। কারণ, দূরদূরান্তের ছাত্রছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা চাই। কিন্তু হস্টেল চালু করে পঠনপাঠন চালু করলে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে যাবে। তার পরেই ঠিক হয়, ডিসেম্বরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে না।
আর অনলাইন-পাঠ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশিই ওঠে পাঠ্যক্রমের প্রসঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে পাঠ্যক্রম কাটছাঁট না-করলেই যে নয়, আলোচনায় সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের আলোচনার ভিত্তিতে আগামী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পাঠ কমানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেই দায়িত্ব অবশ্য ন্যস্ত হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে।