আর কয়েকমাস পরেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে ২০০ আসন জেতার লক্ষ্যে দলেরই ভিন রাজ্যের নেতাদের পাঠানো হচ্ছে এখানে। একই সঙ্গে সেই দলের রাজ্যের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাত থেকে কার্যত পুরো ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের পায়ে পরানো হয়েছে বেড়িও। বর্তমানে ঠুঁটো জগন্নাথ আর কাঠের পুতুল ভিন্ন তাঁরা আর কিছুই নন। আর তার জেরেই এখন রাজ্যে দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীতে ক্ষোভ ক্রমশই চড়ছে। তার থেকেও বড় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এটাই এর পরিনাম না হিতে বিপরীত হয়। ছবিটা এই রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের।
বঙ্গ বিজেপিতে এখন ক্ষমতায় রয়েছে দিলীপ ঘোষের শিবির। আর এই শিবিরের দিকেই দলের অন্দর থেকে বার বার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাকে কেন্দ্রীকরণ করে রাখার পাশাপাশি অনান্য দল থেকে বিশেষ করে তৃণমূল থেকে যাওয়া নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দেওয়ার। সেই সঙ্গে তাঁদের দিকে এই বিরোধী শিবিরের লোকজনদের দলেই চূড়ান্ত ভাবে কোনঠাসা করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। কয়েক মাস আগেই সেই অভিযোগ গিয়েছে দিল্লীতে। দিলীপ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যে মিথ্যা নয় সেটা রাজ্য সফরে এসে ভালমতই টের পেয়েছেন অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা।
অমিত নিজে বাংলায় এসে আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে গেলেও আদৌ সেই লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও অর্জন করা যাবে কিনা তা নিয়েই এখন সন্দেহ দানা বেঁধেছে খোদ রাজ্য বিজেপির অন্দরে। কারন অবশ্যই দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তার জেরেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবার বাংলার বুকে একের পর এক ভিন্ন রাজ্যের দলীয় নেতাদের দীর্ঘমেয়াদী স্তরে এ রাজ্যে পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে। কার্যত এদের হাতেই এ রাজ্যের দলের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই বহিরাগত অবাঙালী ভাষী নেতাদের হাতেই আপাতত রাজ্য বিজেপির ব্যাটন চলে গিয়েছে। এরাই ঠিক করছেন দলের কর্মসূচি, তাতে কে কে অংশ নেবেন, দলের প্রেসমিটে কে কে থাকবেন এইসবই।
এর দরুন বর্তমানে দিলীপ গোষ্ঠীর হাতে কোনও ক্ষমতাই নেই। তাতে দিলীপ বিরোধী শিবিরের নেতারা খুশি হলেও এখন ভয় জন্মাচ্ছে অন্য জায়গায়। ক্ষমতাহীন নেতা থেকে শুরু করে দলীয়কর্মীরা হয় দলের কাজ থেকে বসে যাচ্ছেন নাহলে দল পরিবর্তন করে নিচ্ছেন। কেউ যাচ্ছেন কংগ্রেসে কেউ আবার তৃণমূলে। ফলে বিজেপির নিজস্ব যে ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে তাতে টান পড়তে শুরু করে দিয়েছে। বাংলায় ভিন্ন রাজ্যের নেতাদের এসে কংগ্রেস বা বামেদের হয়ে প্রচার করতে প্রায় প্রতিবছরই নানা নির্বাচনে বা রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে চোখে পড়ে। কিন্তু সেই সব ভিন রাজ্যের নেতাদের হাতে এ রাজ্যে দলের ব্যাটন তুলে দেওয়া হয়না। দলের ক্ষমতা থেকে যায় প্রদেশ কংগ্রেস বা রাজ্য স্তরের বামফ্রন্টের নেতাদের হাতেই।
কিন্তু বিজেপিতে এখন ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির অন্দরেই এখন ভয় ছড়িয়েছে ভিন্ন রাজ্যের নেতাদের এনে মাথার ওপর বসিয়ে দিয়ে বা তাঁদের হাতে দলের সব ক্ষমতা তুলে দিয়ে দলের রাজ্য ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল আদৌ পাওয়া যাবে তো! নাকি দলের অন্দরেই ধস নামবে? দিলীপ ঘোষ নিজে এই অসন্তোষের কথা জানলেও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। কারন মুখ খুললেই রাজ্য সভাপতি পদটিও তার চলে যেতে পারে। তাই বসে বসে দলের অন্দরে নিজের গোষ্ঠীর ভাঙন দেখা ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই এই বিজেপি সাংসদের।